ছোটগল্প কথাসাহিত্য

খান মুহাম্মদ রুমেল | বৃষ্টির অতিথি | তীরন্দাজ ছোটগল্প 

ভরদুপুরে মনি ভাই এসে হাজির!

লবিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি রতন ভাইয়ের সঙ্গে। হঠাৎ দেখি কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকছেন লম্বা চওড়া এক মানুষ। মাথার সামনের দিকে একগাছি রূপালি চুল আর প্রাণখোলা সেই ঠা ঠা হাসি দেখে মুহূর্তেই চিনে ফেলি মনি ভাইকে। কয়েকদিন আগে বলেছিলেন মনি ভাই, হ্যান্ডসাম, তোমাকে দেখতে আসবো একদিন! কিন্তু সেই বলাটা যে এতো দ্রুতই বাস্তব করে ফেলবেন, ভাবিনি মোটেও। তাকে দেখে  ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যাই আমি।

`তারপর কেমন আছো বালক?’ চারপাশ কাঁপিয়ে হাসতে থাকেন মনি ভাই।

কথা ফোটে না আমার মুখে। মিনিটখানেক তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। এগিয়ে আসেন রতন ভাই।

`কেমন আছেন মনি ভাই।‘

`ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?  আপনাদের পাভেলকে দেখতে চলে এলাম’ বলেই আবারও সেই উচ্ছ্বল উত্তাল হাসতে থাকেন মনি ভাই। হাসি ছাড়া কথাই বলতে পারেন না মানুষটা! তাকে সঙ্গে নিয়ে লবির শেষ মাথার সোফায় বসেন রতন ভাই। আর আমি মনে মনে ভাবি কতদিন পর দেখা মনি ভাইয়ের সঙ্গে! এক বছরের বেশি তো হবেই। মনি ভাই আর রতন ভাই বসে গল্প করেন। চা খান। পাশে বসে আমি হু-হ্যাঁ করি আর মনে মনে ভাবি, আমাকে এত পছন্দ  করার কারণ কি মনি ভাইয়ের। মনি ভাই নামি লেখক। সুন্দর কথক। আসর মাতাতে ওস্তাদ। তিনি যখন কথা বলেন, মনেহয় কলকল করে বয়ে চলে একটা স্বচ্ছ জলের নদী। টেলিভিশনে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। যেখানেই যান তাকে ঘিরে থাকে অগুনতি মানুষের ভিড়। সেই তিনি আমার মতো মুখচোরা এক লাজুক ছেলে, যে কথা বলতে গেলে তোতলায়, তাকে কেন  এতটা পছন্দ করেন বোঝার চেষ্টা করি। ভরদপুরে আমাকে দেখার জন্য চলে এসেছেন। সত্যিই খুব অবাক লাগে আমার। একটা জুনিয়র ছেলে এসে ডাকে কী একটা কাজ দেখে দেয়ার জন্য। রতন ভাই আর মনি ভাইকে বসিয়ে রেখে উঠতে হয় আমাকে। পনের বিশ মিনিট পর এসে দেখি শূন্য সোফা। মনি ভাই রতন ভাই, কোথাও কেউ নেই!

ফোন করি মনি ভাইকে।

`হ্যfলো ভাই, চলে গেছেন আপনি?’

`নাহ, তোমাদের ছাদে আছি।‘

`আসতেসি ভাই।‘

ছাদে উঠে দেখি নিখিলদার সঙ্গে গল্প করছেন মনি ভাই। নিখিলদাও লেখক মানুষ। চেয়ার টেনে বসে পড়ি তাদের পাশে। দেশ রাজনীতি সাহিত্য সংস্কৃতি নারী – রাজ্যের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করছেন তারা। নিখিলদা তার অভ্যাসমতো গম্ভীর ও ধীরস্থির। আর মনি ভাই যথারীতি হাসিহাসি মুখ। নিজেদের আলাপ বাদ দিয়ে এখন আমাকে নিয়ে পড়েন মনি ভাই।

`নিখিলদা পাভেলকে দেখসেন, কেমন স্লিম ফিগারের হ্যান্ডসাম একটা ছেলে! ওর কয়টা প্রেমিকা আছে বলেন তো!`

`আপনিও ওর মতোই ছিলেন।‘

খুব শান্ত গলায় বলেন নিখিলদা! মনি ভাই হাসতে থাকেন তার ট্রেডমার্ক হাসি। তাদের দুজনের মাঝে ধীরে গলা খুলি আমি।

`ভাই আমার কোনো প্রেমিকা নাই। মেয়েরা আমাকে পাত্তা দেয় না মোটেও।‘

`ধুর মিয়া, এইটা কোনো কথা কইলা?’

`ভাই সত্যি কথা কারো পছন্দ হয় না, এইটা মূল সমস্যা!’

`হ, মিয়া তুমিতো তো সত্য কথা ছাড়া বলো না!’

আমাদের কথার মাঝখানে কিছু একটা বলতে চান নিখিলদা।

`হ্যাঁ দাদা বলেন। নিখিলদার দিকে তাকান মনি ভাই।‘

`একটা কবিতার পাণ্ডুলিপি ছিল, মনি। আপনার পরিচিত কেউ আছে দেখে দেয়ার?’

`কার স্ক্রিপ্ট? শৌখিন কবি?’

`ওই রকমই আর কি। রিটায়ার্ড স্কুল মাস্টার।‘

`লোক তো আছে অনেকই। কিন্তু এইগুলা কাজ প্রফেশনালি করাই ভালো। কিছু টাকা পয়সা দিলে করে দেবে, একটা পরিচিত ছেলে আছে। কবিতা ভালো বোঝে।‘

`আচ্ছা ঠিক আছে, জানাবো আপনাকে।‘

তারপর খানিকক্ষণ চুপ করে থাকি আমরা তিনজনই। আমার একটা সিগারেট জ্বালাতে ইচ্ছা করে। মনি ভাই সিগারেট খান না। তবে তার সামনে আমি ধুমসে সিগারেট টানি। কিন্তু এখন নিখিলদার সামনে কেমন জানি সঙ্কোচ লাগে।

`চলেন লাঞ্চ করি মনি ভাই। প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলি আমি।‘

`হ্যাঁ চলো।‘

অফিস ক্যান্টিনে তিনজন একসঙ্গে খেতে বসি; নিখিলদা মনি ভাই আর আমি।  খেতে খেতে অনেক কথা বলেন নিখিলদা আর মনি ভাই।

`বুঝলেন নিখিলদা, ছেলেকে বিয়ে দিবো। বউ খুঁজতেসি।‘

`ভালো তো। কেমন মেয়ে খোঁজেন?’

`মেয়ে নিয়ে আমার কোনো চাহিদা নাই। আরে ভাই ওইদিন ছেলেকে বলতেসিলাম, আমার ছেলে হইয়া তুমি একটা প্রেম করতে পারলা না! এইটা কোনো কথা হইলো? লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাইতেসে!’

মনি ভাইয়ের কথা শুনে হো হো করে হাসেন মৃদুভাষী নিখিলদা।

`আরে দাদা, হাসির কথা না। এই বয়সে ছেলের জন্য বউ খোঁজা আমার কাজ? যত্তোসব আজাইরা ঝামেলা!’

`বললেন না তো, কেমন মেয়ে খোঁজেন ছেলের জন্য?’

`আরে দাদা, কেমন মেয়ে মানে? মেয়ের আবার রকমফের কি? শুধু কর্মঠ মেয়ে হলেই চলবে!’

`এটা ভালো বলসেন মনি!’

`শোনেন দাদা, আমি চাই মেয়েরা কাজ করুক। কাজই মেয়েদের ক্ষমতা। ঘরে বসে থাকা কিংবা রান্নাবান্না করার জন্য মেয়েদের জন্ম হয় নাই। যাক বাদ দেন দাদা। কি মিয়া পাভেল তুমি এমন খামোশ হইয়া রইলা ক্যান?’

`নাহ বস, আপনাদের কথা শুনছিলাম।‘

`তোমাদের ক্যান্টিনের খাবার কিন্তু ভালো। বেশ ভালো।‘

আবার আমরা ছাদে গিয়ে বসি। নিখিলদা চলে গেছেন কাজে। আমরা দুজন এটাসেটা নানা বিষয় নিয়ে টুকটাক আলাপ করি। ছেঁড়া-ছেঁড়া নানা বিষয় উঠে আসে আমাদের আলাপে। অফিসের অনেকেই এগিয়ে আসেন মনি ভাইকে দেখে। সবাইকে মনি ভাই চেনেন না ভালো করে। অনেকের নামও জানেন না। তবুও সবার সঙ্গে কী আন্তরিকতা নিয়ে মমতাভরা গলায় কথা বলেন তিনি। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি আর ভাবি, একজন মানুষ এতটা অমায়িক হন কি করে? বাইরে নভেম্বরের দুপুর দ্রুত পায়ে বিকেলের দিকে এগুচ্ছে। আলো নরম হয়ে এসেছে। ঢাকায় এখনো শীত পড়েনি। তবে শরীরের চামড়ায় কেমন যেন টানটান লাগে। 

`তারপর কেমন চলছে তোমার?’

`চলছে ভাই মোটামুটি।‘

`শোনো পাভেল, মন খারাপ করে থাকবে না। মন খারাপ প্রতিভাবিনাশী। জীবনের এই অধ্যায়টা দেখা তোমার জন্য জরুরি ছিল। জীবনে শুধু আলো দেখবে অন্ধকার দেখবে না, তাতো হয় না।‘

`বললাম তো, আমি ভাই মন খারাপ করে থাকি না। আমি ভালো আছি ভাই।‘

মনি ভাই কেমন যেন শুকনো করে হাসেন। শেষের কথাটা বলার সময় আমার গলাটা কী অন্য রকম হয়ে গিয়েছিল? না হলে মনি ভাই অমন করে হাসলেন কেন? তিনি কি কিছু মনে করলেন?

`এই রতন ভাই কোথায় বসেন? চলো, ওনার সঙ্গে দেখা করে বের হবো আমি।‘

`হুম চলেন চারতলায় যাই।‘

মনি ভাইকে রতন ভাইয়ের রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে চলে আসি আমি। কেন জানি খুব মন কেমন করছে। মনি ভাইয়ের সঙ্গে কবে পরিচয় হয়েছিল আমার? এখনো সব স্পষ্ট মনে আছে । মনি ভাই বিখ্যাত মানুষ। আগে থেকেই চিনতাম। তবে কখনো কথা হয়নি কিংবা ব্যক্তিগত পরিচয়ও ছিল না। কয়েক বছর আগে এক বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে দাঁড়িয়েছিলাম। হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অথবা এমনি একা দাঁড়িয়েছিলাম। সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মনি ভাই। আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন তিনি।

`আপনার নাম পাভেল না?’

`জি ভাই। আপনি কেমন আছেন, মনি ভাই?’

`জি আছি, ভালো আছি ভাই।‘

`এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছেন? কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?’

`না ভাই এমনি দাঁড়িয়ে আছি।‘

`চলেন কোথাও বসে চা খাই।‘

`এখানে চায়ের দোকান কোথায় ভাই। চারপাশে তো শুধু কড়া মিষ্টি ওষুধের মতো কফির দোকান।‘

আমার কথা শুনে ঠাঠা করে হাসেন মনি ভাই, তার সেই বিখ্যাত হাসি। 

`আরেহ এই ছেলে তো খুব মজা করে কথা বলতে পারে! চলেন আমার সঙ্গে, দেখি আপনাকে চা খাওয়াতে পারি কি না!’

প্রথম দিন থেকেই মনি ভাইয়ের সঙ্গে আমার মিলে যায়। তিনিও কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেন। তবে ওই দিনের পর বেশ কিছুদিন দেখা হয়নি তার সঙ্গে। হঠাৎ একদিন দেখা শাহবাগের মোড়ে। অনেক দূর থেকে উঁচু গলায় ডাকেন মনি ভাই। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটা টং দোকান থেকে সিগারেট কিনছিলাম আমি। ডাক শুনে এগিয়ে যাই তার দিকে।

`কি মিয়া তোমার দেখি আর কোনো খোঁজ নেই।‘

`ভাই আপনার নম্বর ছিলনা আমার কাছে। কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করি আমি।‘

`শোনো মিয়া, এইসব বুঝাইও না আমারে। শোনো তোমার বয়স কি চল্লিশ হইসে?’

`এখনো হয় নাই। একটু বাকি আছে ভাই।‘

`শোনো, আমার চল্লিশ হইসে বহুত আগেই। আমারে ধুনফুন বোঝানোর চেষ্টা করে লাভ নাই। নাও আমার নম্বর সেভ করে নাও।‘

সেদিন আর খুব বেশি কথা হয়নি। তবে আমার কাছে অবাক লেগেছিল খুব।দ্বিতীয় দিনেই আপনি থেকে তুমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন মনি ভাই। আবার ভালোও লেগেছিল খুব। 

এরপর থেকে মনি ভাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম আষ্টেপৃষ্ঠে। না, খুব যে দেখা হয় আমাদের এমন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা বসে আড্ডা দেই, বিষয়টা এমনও নয়। দেখা হতো আমাদের খুব কমই। ফোনে কথা হতো বেশিরভাগ সময়। তাও খুব লম্বা সময় ধরে নয়। তবু্‌ও বুঝতে পারি, আমার প্রতি এক নিখাদ ভালোবাসা আছে মনি ভাইয়ের মনে। ঈদে কিংবা অন্য নানা রকম উৎসবে মনি ভাই কতদিন ডেকেছেন তার বাসায়। মায়াভরা গলায় বলেছেন, আজকে বাসায় এসো, দুপুরে একসঙ্গে খাবো। তোমার ভাবি খুব ভালো গরুর মাংস করতে জানে। আরও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবকে বলেছি। তুমিও এসো, প্লিজ। ভালো লাগবে তোমার। আমি যাইনি। যেতে ইচ্ছে করতো খুব। কিন্তু ওই যে মানুষের মাঝে গেলে আমি সহজ হতে পারি না। নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি না। কোথায় যেন বাধোবাধো লাগে। মনি ভাইয়ের দাওয়াত পেয়ে প্রতিবারই বলেছি, আসবো ভাই।

`তুমি তো আসবো আসবো বলো সব সময়ই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো আর আসো না। এবার মিস কইরো না কিন্তু।‘

`জি আচ্ছা ভাই।‘

কিন্তু এরপরও যাওয়া হয়নি। শুধু নানা অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গেছি। এসবের পরেও কখনো রাগ করেননি মনি ভাই। যখনই দেখা হয়েছে, জড়িয়ে ধরেছেন পরম উষ্ণতায়। কোথাও আমাকে নিয়ে কথা উঠলেই প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন আমাকে। মনিউর রহমান কেন পাভেল নামে এক তরুণকে এত ভালোবাসেন এনিয়ে কানাঘুষা কম হয়নি। কিন্তু মনি ভাই থেকেছেন তার মতোই।

`চলো পাভেল আগাই।‘

মনি ভাই বের হয়ে এসেছেন রতন ভাইয়ের রুম থেকে।

`চলেন ভাই আপনাকে এগিয়ে দেই।‘

রাস্তায় নামি আমরা দুজন। সন্ধ্যা এগিয়ে আসছে ধীর পায়ে। নভেম্বরের আকাশ থেকে ঝরছে ঝিরিঝির বৃষ্টি। শীত শীত লাগে। হেঁটে বড় রাস্তার মুখে দাঁড়াই আমরা। পাশেই একটা কফির দোকান। আমি একটা সিগারেট ধরাই।

`কফি খাবেন মনি ভাই?’

`চলো।‘

`আপনি ভেতরে গিয়ে বসেন, আমি সিগারেট শেষ  করে আসছি।‘

`তুমি সিগারেট টানো আমি দাঁড়াই।‘

`ভিজে যাচ্ছেন তো আপনি।‘

`ধুর মিয়া তোমার ন্যাকামি রাখো তো!’

দুইটা কফির অর্ডার দিয়ে মুখোমুখি বসি আমি আর মনি ভাই। দোকানে আমরা দুজন ছাড়া আর কোনো কাস্টমার নেই।

`ভাই আপনি আসছেন, আমি খুব খুশি হইসি।‘

`শোনো, এইসব আদিখ্যেতামার্কা কথা বলবা না!’

`আমি আর কিছুই বলি না। কফির জন্য অপেক্ষা করি।‘

`শোনো, এমন ভ্যাবদা মাইরা থাইকো না। তোমার জন্য আবার আসবে সুদিন। আলো ঝলমলে দিনে আবার ফুল হয়ে ফুটবে তুমি নিশ্চয়ই।‘

`ভাই, আমি ঠিক আছি। শুধু মাঝে মাঝে একটু অস্থির লাগে। এইটা নিয়ে আপনি চিন্তা কইরেন না।‘

`কী কফি খাওয়াইলা মিয়া। একটুও ভালো লাগে নাই। হা হা হা হা!’

`ভাই, ঘৃণা ফেরত দিতে হয় না। কিন্তু ভালোবাসা ফেরত দিতে হয়। যদি কখনো সুযোগ আসে আপনার ভালোবাসা শতগুণে ফেরত দেবো ভাই।`

`তুমি মিয়া একটা পাগল!’

বৃষ্টি থেমে গেছে। সন্ধ্যাবাতি জ্বলে উঠেছে সড়কে। আশপাশের বাড়িঘরের চিলতে চিলতে আলো এসে পড়েছে রাস্তায়। বৃষ্টিভেজা রাস্তা চকচক করে নিয়ন আলোয়। মনি ভাই রিকশায় উঠে বসেন। হাত নেড়ে বিদায় জানান আমাকে। তাগড়া জোয়ান রিকশাচালক দ্রুত গতিতে এগিয়ে যান মনি ভাইকে নিয়ে। আমি অপলক চোখে তাকিয়ে থাকি মনি ভাইয়ের চলে যাওয়া পথের দিকে। বৃষ্টিভেজা একটা নেড়ি কুকুর এসে দাঁড়ায় আমার পাশে। কুকুরটা কফিশপের বারান্দায় দাঁড়িয়ে জোরে ঝাকি দিয়ে শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায় বৃষ্টির জল। জলের ছিটে এসে লাগে আমার জুতায়, প্যান্টে। আমার মনেহয় কুকুরটার মতো এভাবে গা ঝাড়া দিয়ে যদি ঝেড়ে ফেলা যেতো সব দুঃখ-বেদনা! বৃষ্টির তোড় আবার বাড়ছে। আমার ভিজতে ইচ্ছে করে খুব। নেমে যাই পথে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে হাঁটি ধীর পায়ে। অসময়ের বৃষ্টিতে হয়তো জ্বর আসবে। আসুক!

হাঁটি আর মনে মনে বলি, কে কাকে ছেড়ে গেল রুনু। এই বৃষ্টির ফোটাগুলো কি আমাকেই সিক্ত করে? তোমাদের ছাদবাগানের টবগুলোর মাটিও তো শুষে নেয় জল, তারপর গাছগুলো সজীব হয়। সেভাবেই তো আমার বেদনাও শুষে নিতে পারত কেউ।

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field