তীরন্দাজ অনুবাদ
মধ্যযুগের ইউরোপে যখন খ্রিস্টান ধর্মের কাঠামো আবদ্ধতা ও আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ, তখন সেইন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি (১১৮২–১২২৬) একজন ধ্রুপদী ব্যতিক্রম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর জীবন শুধুমাত্র খ্রিস্টীয় ভাবধারায় নয়, বরং বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও দরিদ্রতা, দয়া, প্রেম ও প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংলাপের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আজকের পরিবেশবাদ, আন্তঃধর্ম সংলাপ ও আধ্যাত্মিকতার বহু ধারা তাঁর প্রভাবকে স্মরণীয় হয়ে ওঠে। উপরন্তু তিনি একজন কবিত্বময় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার মরমিভাবের পদাবলি এখনও ভাবুক মনে আলোড়ন তোলে।
ফ্রান্সিস জন্মগ্রহণ করেন ১১৮২ খ্রিস্টাব্দে ইতালির আসিসি শহরে, এক ধনী বস্ত্রব্যবসায়ীর পরিবারে। তাঁর জন্মনাম ছিল Giovanni di Pietro di Bernardone. তাঁর বাবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ফ্রান্সে যাওয়ায় তাকে সবাই ‘ফ্রান্সিস’ নামে ডাকতে শুরু করেন। শৈশবে তিনি ছিলেন উচ্ছল, স্বপ্নবিলাসী ও সামরিক কাজে আগ্রহী। তিনি নাইট হওয়ার বাসনায় যুদ্ধে গিয়েছিলেন, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা এবং একটা অলৌকিক স্বপ্ন তাঁকে পাল্টে দেয়।
১২০৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে ফ্রান্সিস এক গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তিনি একদিন আসিসির সান দামিয়ানো গির্জায় প্রার্থনা করছিলেন, তখন ক্রুশবিদ্ধ যিশুর একটি ছবি তাঁকে বলল, ‘ফ্রান্সিস, আমার গির্জা ভেঙে পড়েছে, এটি পুনর্গঠন করো।’
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে দরিদ্র্য জীবন বেছে নেন। পিতার অর্থ-সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়ে তিনি নগ্নপদে ঈশ্বরের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।
ফ্রান্সিস তাঁর পুরো জীবন দারিদ্র্যকে ‘লেডি পভার্টি’ নামে পবিত্র সঙ্গিনী হিসেবে দেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, খ্রিস্ট যেমন নিঃস্ব হয়ে জন্মেছিলেন তেমনি ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য দারিদ্র্য অপরিহার্য।
তিনি বলতেন, ‘যদি এমন কিছু মানুষ থাকে যারা ঈশ্বরের কোনো সৃষ্টিকে সহানুভূতি এবং করুণার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করবে, তাহলে সেই মানুষগুলো তাদের আশেপাশের মানুষের সাথেও একই রকম আচরণ করবে।’ এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে শুধু সমাজহিতৈষী নয়, বরং সমাজ-পরিবর্তনের এক বিকল্প আধ্যাত্মিক পথিকৃৎ করে তোলে।
ফ্রান্সিস প্রকৃতিকে শুধু ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়, ঈশ্বরের প্রতিফলন হিসেবে দেখতেন। তাঁর বিখ্যাত ‘সূর্য বন্দনা’ (Canticle of the Sun) কবিতায় তিনি সূর্য, চাঁদ, বাতাস, পানি, আগুন, মৃত্যু – সবকিছুকে ‘ভাই’ ও ‘বোন’ নামে সম্বোধন করতেন।
এটা শুধু সাহিত্য নয়, বরং একটি তত্ত্ব, আধুনিক পরিবেশবাদ ও deep ecology-র পটভূমি তৈরি করে দিয়েছে। ১৯৭৯ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় তাঁকে ‘Patron Saint of Ecology’ বলে ভূষিত করেন।
ক্রুসেডের সময় ফ্রান্সিস মিশরে গিয়ে মুসলিম শাসক সুলতান আল-মালিক আল-কামিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি যুদ্ধ নয়, প্রেমের ভাষায় আলাপ করেছিলেন। এই ঘটনা শুধু তাকে ধর্মীয় সংলাপের অগ্রদূত হিসেবে নয়, বরং শান্তির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিল। ফ্রান্সিস বিশ্বাস করতেন, ‘সত্যকে ভালোবাসা এবং নমিত হয়ে প্রচার করতে হবে, অস্ত্রের মাধ্যমে নয়।’
ফ্রান্সিস তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ফ্রাঁন্সিক্যান ধারার সৃষ্টি করেন। এরা এমন একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় যারা দারিদ্র্য, আজ্ঞাবহতা এবং নির্লিপ্ততাকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে। এই আন্দোলন বহু খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করেছে, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শিল্প, সংগীত, সাহিত্য, দর্শন এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
ফ্রান্সিসের লেখা ‘Canticle of the Creatures’ (অন্যান্য নাম : The Canticle of the Sun, Laudes Creaturarum, Praise of the Creatures)–কে ইতালীয় সাহিত্যের প্রথম গদ্যকবিতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি সাধারণ কথ্যভাষায় ঈশ্বরের প্রশংসা করেছেন, যাকে লোকায়ত ভাষার মুক্তি বলে ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি ঐশ্বরিক সত্যকে জনসাধারণের বোধগম্য ভাষায় ব্যক্ত করার সাহস দেখিয়েছেন। এটা মধ্যযুগীয় সাহিত্যধারায় যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
সন্ত ও সুফী
সন্ত ফ্রান্সিস ও সুফিদের মধ্যে চমৎকার সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন উভয় শ্রেণির অনুসারীরা জীবনে দারিদ্র্যকে আধ্যাত্মিক উত্তরণের পথ, ঈশ্বরের প্রেমে নিঃস্ব হয়ে আত্মসমর্পণ করা, প্রকৃতির প্রতি সহমর্মিতা আন্তঃধর্মের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে থাকে। ফ্রান্সিস যেন এক খ্রিস্টীয় ফকির, যার পথ রুমির মতোই প্রেমানুভূতির পথ।
সেইন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি ইতিহাসের কোনো একটি ধর্ম বা ভূগোলের গণ্ডিতে আবদ্ধ নন। তিনি বিশ্বমানবতার চেতনায় দয়া, দারিদ্র্য ও প্রকৃতির প্রতি প্রেমের এক চিরন্তন রূপক। আধুনিক কালে পোপ ফ্রান্সিস (১৯৩৬ – ২০২৫) তাঁর পোপীয় নাম হিসাবে সন্ত ফ্রান্সিসের নাম গ্রহণ করেছেন। তিনি যে বার্তা দিয়ে গেছেন তা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ।
পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘আসিসির এই দরিদ্র মানুষটি’ একজন ‘শান্তির মানুষ, দারিদ্র্যের মানুষ, এমন একজন যিনি সৃষ্টিকে ভালোবাসতেন এবং রক্ষা করতেন’ — অন্য কথায়, তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি অভিন্ন বাস্তুশাস্ত্রর (integral ecology) ধারণাকে মূর্ত করে তোলেন।
বিশ্ব যখন ভোগবাদ, সহিংসতা ও পরিবেশ সংকটে আক্রান্ত, তখন ফ্রান্সিসের জীবনদর্শন হয়ে উঠতে পারে একটি আধ্যাত্মিক আলোকবর্তিকা।
সন্ত ফ্রান্সিসের প্রার্থনা হলো : ‘প্রভু, আমাকে তোমার শান্তির বাহক করো; যেখানে ঘৃণা আছে, সেখানে যেন আমি ভালোবাসা বুনে দিতে পারি…।’ এটি শুধুমাত্র প্রার্থনা নয়, বরং ফ্রান্সিসের জীবনের সারমর্ম।
সন্ত ফ্রান্সিস শুধু সাধু নন, তিনি একই সাথে একজন তাৎপর্যপূর্ণ কবি — আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃতি ও প্রেমের কবি। তার কবিতায় রয়েছে আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি, যেখানে প্রকৃতি, মানুষ, মৃত্যু, দরিদ্রতা, ঈশ্বর – সব কিছু এক ঐকতানে বাঁধা। এটি কেবল ধর্মীয় স্তব নয়, বরং এক সর্বজনীন মানবিক ও পরিবেশবাদী ঘোষণা। আজকের যুগে, যখন প্রকৃতি মানুষকে প্রশ্ন করছে, তখন ফ্রান্সিসের কবিতা তার উত্তর হয়ে ওঠে।
সন্ত ফ্রান্সিসের রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা ‘সৃষ্টির স্তব’ (ইংরেজিতে ‘Canticle of the Creatures)-এর কথাই ধরা যাক। এটি খ্রিস্টীয় ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন ইতালীয় গদ্যকবিতা। এটি লাতিন নয়, বরং উমব্রিয়ান উপভাষায় লেখা, যা প্রাক-দান্তে যুগে ধর্মীয় কবিতাকে প্রথমবারের মতো সাধারণ জনমানসে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এই ভাষার ব্যবহার ধর্মীয় পাঠের অভিজাত প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ করে। সাধারণ মানুষের ভাষায় ঈশ্বর ও সৃষ্টির স্তবগান ছিল এক বিপ্লব। ছন্দ ও অন্ত্যমিলের বদলে গদ্য কবিতায় বর্ণনার গীতিময়তা দিয়ে পাঠকের অন্তরকে স্পর্শ করেন তিনি।
এই কবিতায় তিনি প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকে ব্যক্তিত্ব দেন — সূর্য : ভাই, চাঁদ ও তারা : বোন, বাতাস : ভাই, পানি : বোন, আগুন : ভাই, পৃথিবী : মা! এখানে ঈশ্বরের সৃষ্টি শুধু বস্তু নয়, একেকজন আত্মীয়, সবাই একটি আধ্যাত্মিক পরিবারের সদস্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি মধ্যযুগে ছিল একেবারে নতুন ও সাহসী। এবং ফ্রান্সিসের কবিতা এখনও প্রাসঙ্গিক। তাঁর কবিতার ভাবধারা আধুনিক পরিবেশবাদী সাহিত্য এবং প্রার্থনা-সাহিত্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
সন্ত ফ্রান্সিসের কিছু কবিতা
সৃষ্টির স্তবগান
সর্বোচ্চ, সর্বশক্তিমান, সর্বমঙ্গলময় প্রভু!
সকল প্রশংসা তোমার, সকল গৌরব, সকল মর্যাদা
এবং সকল আশীর্বাদও।
শুধু তোমারই প্রাপ্য এগুলো, হে সর্বোচ্চ!
কোনও মানুষের ঠোঁট যথাযোগ্য নয়
তোমার নাম উচ্চারণের।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, প্রভু, তোমার তৈরি সব কিছুর জন্য—
প্রথমে আমার ভাই সূর্য,
যিনি আলো এনে দেন;
তাঁর মাধ্যমে তুমি আমাদের আলো দাও।
তিনি কত সুন্দর, কত দীপ্তিময়!
তোমার প্রতিচ্ছবি বহন করেন তিনি।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, চাঁদ ও তারা বোনদের জন্য,
যাদের তুমি আকাশে সৃষ্টি করেছ, উজ্জ্বল,
মূল্যবান আর সৌন্দর্যময়।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, হাওয়া-বাতাস ভাইদের জন্য,
যারা শান্ত বা ঝড়ের রূপে আসে,
আর তোমার সমস্ত সৃষ্টি লালন করে।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, পানি বোনের জন্য—
যিনি উপকারী, নম্র, মূল্যবান ও নির্মল।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, আগুন ভাইয়ের জন্য—
যার মাধ্যমে তুমি রাতকে আলোকিত কর।
তিনি কত সুন্দর, কত আনন্দময়!
শক্তিময় ও প্রোজ্জ্বল।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, বোন পৃথিবী, আমাদের মায়ের জন্য,
যিনি আমাদের আহার দেন,
ফলমূল, রঙিন ফুল ও ভেষজ উৎপন্ন করেন।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু,
যারা ক্ষমা করেন তোমার প্রেমে—
যারা কষ্ট ও পরীক্ষায় স্থির থাকেন।
ধন্য তারা যারা শান্তিতে সহ্য করে,
কারণ তারা তোমার করুণায় মুকুটধারী হবে।
সকল প্রশংসা হোক তোমার, হে প্রভু, মৃত্যু বোনের জন্য,
যার আলিঙ্গন থেকে কোনো মানুষ পালাতে পারে না।
ধিক তাদের, যারা মৃত্যুর সময় পাপগ্রস্ত থাকে!
ধন্য তারা, যাদের সে তোমার ইচ্ছার কাজে পায়!
দ্বিতীয় মৃত্যু তাদের কিছুই করতে পারবে না।
প্রশংসা করো, আশীর্বাদ করো আমার প্রভুকে, তাঁকে কৃতজ্ঞতা দাও,
আর তাঁকে মহা বিনয়ে সেবা করো।
কষ্ট না দেওয়া…
আমাদের বিনম্র ভাইদের (প্রাণীদের) যেন কষ্ট না দিই–
এটাই তাদের প্রতি আমাদের প্রথম কর্তব্য,
কিন্তু কেবল এটুকুতে থেমে থাকাই যথেষ্ট নয়।
আমাদের আরও উচ্চতর একটি দায়িত্ব আছে :
যখনই তাদের প্রয়োজন হয় আমাদেরকে,
তাদের সেবায় এগিয়ে যেন যাই।
প্রেমের গাছ ছড়িয়ে দিয়েছে শিকড়
আমার হৃদয়ের গভীরে,
আর তার মাথা তুলেছে উপরে;
প্রেমের গাছ
ফলে ভরা তার ডালপালা—
আনন্দ বিলায়,
হৃদয় ভাসায়, ইন্দ্রিয়কে মোহিত করে।
প্রেমের মধুর মোহে আমি জড়িয়ে থাকি তোমার সাথে,
হে প্রেমের পূর্ণ উৎস…
সমগ্র মানবজাতি কম্পমান হোক
সমগ্র মানবজাতি কম্পমান হোক,
সমগ্র বিশ্ব কাঁপুক,
আর স্বর্গ আনন্দে উদ্বেল হোক,
যখন জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র খ্রিস্ট
যাজকের হাতে
বেদির উপর অবতীর্ণ হন।
হে অতুলনীয় উচ্চতা ও মহাস্বল্পতা!
হে মহীয়ান নম্রতা!
হে নম্র মহিমা!
সার্বভৌম ঈশ্বর, ঈশ্বরপুত্র,
নিজেকে এমনভাবে নম্র করেন,
যেন আমাদের মুক্তির জন্য
তিনি একটি সামান্য রুটির খণ্ডে লুকিয়ে থাকেন!
ভাইয়েরা, দেখো ঈশ্বরের নম্রতা
আর তোমাদের হৃদয় ঢেলে দাও তাঁর সামনে!
নিজেদের নম্র করো,
যাতে তিনি তোমাদের মহিমান্বিত করতে পারেন।
তাই,
নিজেদের মধ্যে কিছুই রেখো না শুধু নিজের জন্য—
যিনি নিজেকে পুরোপুরি তোমাদের দেন,
তাঁর কাছে পুরোপুরি ফিরিয়ে দাও নিজেকে।
আমাকে তোমার শান্তির যন্ত্র বানাও
হে প্রভু, আমাকে তোমার শান্তির যন্ত্র বানাও।
যেখানে ঘৃণা আছে, সেখানে যেন ভালোবাসা বপন করি;
যেখানে আঘাত, সেখানে ক্ষমা;
যেখানে সন্দেহ, সেখানে বিশ্বাস;
যেখানে হতাশা, সেখানে আশা;
যেখানে অন্ধকার, সেখানে আলো;
যেখানে বিষাদ, সেখানে আনন্দ।
হে ঐশী গুরু,
আমার চাওয়া যেন না হয় সান্ত্বনা পাওয়া, বরং হোক সান্ত্বনা দেওয়া;
আমাকে বুঝুক – এমন নয় নয়, বরং আমি যেন বুঝি;
ভালোবাসা পাওয়া নয়, বরং ভালোবাসতে পারা।
কারণ—
আমরা যা দিই তা-ই আমরা পাই,
ক্ষমা করেই আমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হই,
আর মৃত্যুতেই আমরা জন্ম নিই অনন্ত জীবনে।
তিনি চাইলেন দান
ঈশ্বর আমার বাড়িতে এলেন
আর চাইলেন দান।
আর আমি হাঁটু গেড়ে বসে বললাম,
‘প্রিয়তম,
কী দিতে পারি আমি?’
‘শুধু প্রেম, বললেন তিনি।
‘শুধু প্রেম।’
ঈশ্বর নতজানু হন
মনে হয় ঈশ্বর একটু পক্ষপাতী হয়ে থাকতে পারেন।
একবার তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটলেন
এই পৃথিবীর পথে,
আর আমরা প্রতিটি হৃদয়ের দিকে তাকালাম,
দেখলাম, তিনি একটু বেশিক্ষণ থেমে থাকেন
যে-কোনো কান্নারত মুখের সামনে,
আর যেসব চোখে হাসি থাকে
সেদিকেও তাঁর চাউনি দীর্ঘ হয়।
আর যখন আমরা এগিয়ে যাই
কোনো উপাসনায় মগ্ন আত্মার পাশ দিয়ে,
ঈশ্বরও তখন
নতজানু হয়ে পড়েন।
জেনেছি বুঝেছি আমি :
ঈশ্বর ভালোবাসেন তার সৃষ্টিকে।
কি অপূর্ব মহিমা…
কি অপূর্ব মহিমা!
কি বিস্ময়কর নম্রতা!
হে উচ্চতম বিনয়!
যে সমগ্র বিশ্বের প্রভু,
ঈশ্বর এবং ঈশ্বরপুত্র,
তিনি নিজেকে এমনভাবে নম্র করেন
যেন একটুকরো রুটির মধ্যে লুকিয়ে থাকেন—
আমাদের মুক্তির জন্য!
“…এই পৃথিবীতে আমি
ঈশ্বরপুত্রকে নিজের চোখে দেখতে পারি না,
তাঁর পবিত্র শরীর ও রক্ত ব্যতীত।”
Leave feedback about this