অনুবাদ কবিতা কবিতা বিশেষ সংখ্যা

তাডিউস ডম্বারোস্কি | কবিতাগুচ্ছ | ভাষান্তর : মঈনুস সুলতান | তীরন্দাজ নববর্ষ সংখ্যা

Basic RGB

তীরন্দাজ নববর্ষ সংখ্যা

পোলান্ডের যশস্বী কবি তাডিউস ডম্বারোস্কি (জ. ১৯৭৯) ইতোমধ্যে সৃজনশীল পদাবলী ছাড়া গদ্য, বিশেষভাবে সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনাতে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ‘তোপাস’ শিরোনামে একটি দ্বিমাসিক সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক। ‘ইউরোপীয়ান পোয়েট অব ফ্রিডম ফেস্টিভ্যাল’ নামক কবিতা উৎসবের আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বিশটি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়, বেশকিছু কবিতা ভাষান্তরে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকা : ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’, ‘দ্য আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ’, ‘পোয়েট্রি ডেইলি’ প্রভৃতিতে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ‘ব্ল্যাক স্কোয়ার’ ও পোস্ট’ শিরোনামে কবির দুটি কাব্যসংকলন ইতোমধ্যে শুধু পাঠকপ্রিয়তা নয়, বোদ্ধাদের নজর কাড়তেও সমর্থ হয়েছে। কবি ডম্বারোস্কির খ্যাতির শিরোপায় যুক্ত হয়েছে সাহিত্য পুরষ্কারের বেশ কতগুলো পালকও — যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হিউবার্ট বুরদা প্রাইজ (২০০৮), প্রাইজ ফর ফাউন্ডেশন ফর পোলিশ কালচার (২০০৬) ইত্যাদি। কবি বাল্টিক সমুদ্র তীরবর্তী বন্দর-নগরী গোদানস্কে বসবাস করছেন।

ডম্বারোস্কির প্রথম দিককার কাব্যকলার বৈশিষ্ট্যে সঙ্গে বেড়ে ওঠা একটি শিশুর ধর্মীয় প্রতিবেশের প্রতি প্রবল প্রতিক্রিয়ার যেমন সন্ধান পাওয়া যায়, তেমনি একটি বালকের শরীরী ভালোবাসা সম্পর্কে ধারণা লাভের প্রয়াসও পরিলক্ষিত হয়। কিছু কবিতায় পাপ, স্বর্গ ও নরক প্রভৃতির অনুসঙ্গের পৌনঃপুনিক উপস্থিতির জন্য কোন কোন সাহিত্য সমালোচক তাঁর রচনাকে ধর্মীয় ভাবধারায় উজ্জীবিত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে অন্য ক্রিটিকরা ধর্মীয় থিমের ব্যবহারকে বিবেচনা করেন প্রতীক হিসেবে, যার মাধ্যমে ভাবগম্ভীর বিষয়বস্তুর আবডালে ডম্বারোস্কির কাব্যকলায় বরং তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্গাত্মক আবহ। উল্লেখ আবশ্যক, সাম্প্রতিক কালের ক্রিটিকরা তাঁকে উত্তারাধুনিক সরণীর পথিক বলে চিহ্ণিত করে থাকেন। নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে কবির দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে :

“ভাষার অতীত এমন একটা কিছু আছে, যা শুধুমাত্র বর্ণিত হতে পারে নীরবতা অন্বেষণের ভেতর। ধরা যাক, তোমার আছে দুটি চোখ, তারপরও তুমি কিন্তু দেখতে পাও না সমস্ত কিছু; ভাষা-বিষয়ে আছে প্রভূত দখল, কিন্তু অনেক কিছুরই বর্ণনা করতে তুমি অপারগ। কবির কাঙ্ক্ষিত নীরবতা হতে হবে কেবলমাত্র বাকপটুত্বে পরিশিলীত হওয়া নয়, কবিতাক্রান্তও; নীরবতা উদযাপনের শিল্প আয়ত্ব করতে পারে হাতে গোনা জনা কয়েক।”

ডম্বারোস্কির কবিতার নিবিড় পাঠে যে বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রতীকের মাধ্যমে সমাজের চলমান ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে কবির সচেতনতা, লিরিক্যাল আঙ্গিকে গল্প বলে যাওয়ার অসামান্য দক্ষতা, কাব্যিক অভিব্যাক্তির সঙ্গে অন্তর্দৃষ্টি, সংবেদনের সমন্বয় এবং আপতদৃষ্টিতে সামান্য পর্যবেক্ষণকে চিরায়ত করে তোলার সফল প্রয়াস, প্রভৃতি।
এখানে উপস্থাপিত কবিতাগুলো, কবির আলোকচিত্র ও বায়ো-বিষয়ক তথ্যের সূত্র ইন্টারনেটের একাধিক ওয়েবসাইট। তবে উল্লেখ আবশ্যক যে, কবিতগুলো ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য নিউ ইয়র্কারের একাধিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

++++ বিরতি

সাইকেল চালাতে গিয়ে আমি ভেঙেছি যে বাহু
শল্যচিকিৎসকরা নিপুণ দক্ষতায় মেরামত করে দিয়েছেন তা,
ব্যাথা দূরীভূত হয়নি পুরোপুরি,
এবং তা ত্রমে ক্রমে যদিও এগিয়ে যাচ্ছে নিরাময়ের পথে
অনুমান করি, হপ্তাকয়েক লেগে যেতে পারে পুরোপুরি সেরে উঠতে।

আমার স্বদেশের পূর্বসীমান্ত জুড়ে চলছে যুদ্ধ,
শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে ওঠা মানুষেরা অস্ত্র তুলে নিয়ে
জীবন বাজি রেখে লড়ছে, তাদের করোটিতে
জগতের আলো ও অন্ধকার মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে,
তারা যেন গোলাগুলি-বারুদের অংশ হয়ে
লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই বিষ্ফোরিত হচ্ছে।

ইত্যবসরে— আমার বাহু,
যা ভেঙেছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়,
অতি ধীরে সেরে উঠছে,
যার অর্থ হলো— এবারকার গ্রীষ্ম ঋতুতে
সরোবরে সাঁতার কাটাটা বাদ যাবে,
রোববারে যাওয়াও যাবে না সমুদ্র সৈকতে,

এমন কী এক বছরের ছোট্ট মেয়েটির বোঝা কাঁধে নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ারও
কোন উপায় নেই, যে বার বার প্লাস্টারে জড়ানো বাহুটির দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁট জোড়াকে ঘোড়ার নালের আকৃতিতে বাঁকিয়ে নিচ্ছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবান কঙ্কালরা চালিয়ে যাচ্ছে
ঘোরতর ন্যায়নিষ্ঠ লড়াই, অন্যায়ের ধ্বজাধারী কঙ্কালদের হাড়গোড় ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে,এবং আমি সচেতন হয়েছি, আরো মাস তিনেক আমাকে আপেক্ষা করতে হবে— স্নানে ধুয়েমুছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে।

যখন সেরে উঠবো সম্পূর্ণভাবে, বিশ্বের কঙ্কালের তালিকায় আমিও অন্তর্ভুক্ত হবো ফের, আর যদি আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোন কিছু ভেঙেচুরে যায়, তা হবে সত্যিকারের লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে। আমার সেরে ওঠা হাত তুলে নেবে একটি হাতিয়ার, আর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমে যাব লড়াইয়ের ময়দানে, আমার তর্জনি শিখে নেবে কীভাবে নীরবে ট্রিগারের ঘোড়াটি দাবিয়ে ছুড়তে হয় গুলি— হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়ে গুনি অপেক্ষার প্রহর, আর আমার করোটি ভরে ওঠে এ ধরনের ভাবনাচিন্তায়।

কিন্তু মাস কয়েক পর, যখন প্লাস্টার খোলা হয়, কম্পিত হস্তে আমি আমার ছোট্ট মেয়েটিকে দেখাই— কীরকম নাদুসনুদুস একটি চড়ুই বসে দোল খাচ্ছে ভঙ্গুর হিলহিলে একটি ডালে।

++++ গোপনে পড়ার বিষয়

কেউ যেন পড়তে পারে ফের ভেবে সড়কের পাশে রেখে যাওয়া
বইপত্তর আমি তুলে নিই পঠিত-পুস্তকের গন্ধ শোঁকার জন্য,
ব্যবহারে মলিন গ্রন্থে নাক গুঁজে— পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ঢুকে পড়ি—
যা নয় আমার সে জগতে, হাঁটাচলা করি অচেনা লোকের আঙিনায়—ঢুকে পড়ি তাদের বসতবাড়িতে, উঁকি দিয়ে দেখি রসুইখানায় রান্নাবান্নার আয়োজন, এমন কী চুপিসারে হানা দিই শয়নকক্ষেও। কিন্তু তাদের যাপিত জীবনের গন্ধ দূরীভূত হলে পর নীরবে গ্রন্থটি নিসিক্ত হয়ে ওঠে আমার অনুরাগের সঞ্জিবনীতে;
কোন এক অপরাহ্নে অতঃপর পুস্তকটি রেখে আসি বাসস্টপের বেঞ্চে কিংবা ডাকবাক্সের ওপর। তাদের নিজ নিজ অপরাধ নিয়ে সদা ব্যাস্তসমস্ত, তাদের প্রেম— দাম্পত্য উদযাপন; ভালো ও মন্দ, সমস্ত কিছু নজর রাখে— বহতা সময়ের সাজানো প্রেক্ষাপটে; চরিত্রদের কোন ধারণাই নেই— ঠিক ক’খানি পুস্তক তাদের জামাকাপড়ের আন্তরালে নীরবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

++++ মৃত্যু

জীবনে কতবার— বাস্তবিক কতবার— মৃত্যু হয়েছে আমার,
শুমার করে বলা সত্যিই ভারি মুশকিল, কারণ আমি নিশ্চিত যে বরণ করেছি আমি মৃত্যু। আজ চলমান ট্রামের পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম, ঘঁষা খেতেই— ধাক্কাটি সামলাতে সামলাতে আমি চাক্ষুষ করি আমার মৃত্যু; যখন আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম ওপাশের এভিন্যুর দিকে, দেখি—ট্রামলাইনের পাশ ঘেঁষে পড়ে আসছ আমার নীরব নিথর দেহ—

অথবা নয় বছর আগে,
যখন সাইকেলের প্যাডেল মেরে এগিয়ে যেতে যেতে আচমকা এক ধাক্কায় চলে যাই ধর্মযাজকের মোটরকারের চাকার তলায়, উইন্ডশীল্ডের বিপুল আঘাতে যখন ফেটে গিয়েছে খুলির হাড়গোড়, তখন কী নিহত হইনি আমি; এবং ধরা যাক সাত বছর বয়সের ছেলেটির কথা, কার্নিশ ঘেঁষে হেঁটে যাওয়ার সময়— পায়ের গুছিতে অপ্রত্যাশিত খিঁচুনির কারণে হেলে পড়েছিল ছাদের ভেতর দিকে, সে কী তার মৃতদেহটিকে ফেলে রেখে আসেনি ছাদের তলায় ফুটপাতে? মনে পড়ে, এ রকমের কিছু মৃত্যুর কথা, কতটি সম্ভাব্য মৃত্যুর ঘটনা— যা থেকে যে ভাবেই হোক বেঁচে গেছি?
অনেক বছর ধরে বোধ করি আমি উত্থিত হচ্ছি স্বর্গলোকের অতি উঁচু উৃপত্যকায়। কিন্তু— শুধু সম্প্রতি, দারুণ এক আতঙ্ক নীরবে জানাচ্ছে আমাকে যে, একদিন সত্যি বাস্তবিকই সমাপ্ত হবে এ মৃত্যুর পরিক্রমা।

কীভাবে জানবো আমি কী ঘটছে হঠাৎ অন্ধকারে—
এখন,আমি যখন হোঁচট খাওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছি শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলতে ধুলোবালি—সে সময় প্রত্যক্ষ করি নিদারুণ অন্ধকার— যাতে বৃক্ষরাজির শিকড় হয় ঊর্ধমুখি—ডিসেম্বর মাসের পড়ন্ত বিকালে কীভাবে জানবো আমি— তা কী স্বর্গ নাকি নরক?

++++কিছু পাওয়ার জন্য খুব দেরি, কোন কিছু না পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি

অনেক বছর পর অপ্রত্যাশিতভাবে ফের দেখা হবে আমাদের, উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমরা ফেনা উপচানো বিয়ারের সঙ্গে মেশাবো ওয়াইন, দেব ভোদকার ফোঁড়নও, মাঝরাতে বাইসাইকেল চড়ে এক সঙ্গে ঘুরপাক করব আবাসিক এলাকায়, অপ্রত্যাশিতভাবে পথের পাশের উঁচু পাথুরে ফুটপাতে ধাক্কা লেগে পড়ে যাব, তছনছ হয়ে যাবে কেয়ারি করা ফুলের বিন্যাস, অপ্রত্যাশিতভাবে বেরিয়ে আসা ডালে ঘঁষা লেগে কেটে যাবে আমাদের গণ্ডদেশ, হোঁচট খেয়ে পড়া থেকে উঠে, বেঁকেচুরে যাওয়া সাইকেলটি ঠেলে এসে পড়বো আমার বাসস্থানে, জখমের ক্ষত ধুয়েমুছে—মলম মাখিয়ে তাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে বিছানায় শুয়ে পড়ব সটান, তলিয়েও যাব গাঢ় ঘুমে, তারপর ভোররাতে অপ্রত্যাশিতভাবে জন্তুদের মতো মিলিত হবো দৈহিক ভালোবাসায়, আর অতঙ্কে ভুগবো যদিবা অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া সময়, যা বিগত হয়েছে অনেক বছর আগে, যখন আমরা মানুষের মতো দাম্পত্যরীতিতে মিলিত হতাম সঙ্গমে।

+++ প্রয়াত জনের বিষয়-আশয় জীবিত কখনো পারবে না বুঝতে

প্রয়াত জনের বিষয়-আশয় জীবিত কখনো পারবে না বুঝতে
আর মৃতও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হবে জীবিতের দৃষ্টিভঙ্গি—
তার বোধশক্তির সীমাবদ্ধতা।
স্বর্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে জীবিত জনের অবিশ্বাস এত প্রবল যে—
যদি তাকে দেয়া হয় এমন এক সুযোগ— যেখানে সে আরামকেদারায় বসে
বাধ্য হবে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে,
সে তার প্রতিফলনের দিকে তাকিয়ে তাই করবে
ভিন্ন কিছুতে সে আগ্রহী হবে না একেবারে,
অথবা স্বর্গ যদি হয় আকারে ছোট্ট তবে কফিনের মতো নিরাপদ
সে তাতেও দ্বিধাহীনভাবে সম্মত হবে।
যদি মৃত কখনো— ওপারে আসলে ব্যাপার কী
জীবিতকে মন খুলে বলতে চায়,
না পারবে না বলতে— তাকে থাকতে হবে পুরোপুরি নিশ্চুপ।

+++ ত্রিশ বছর বয়স্ক একটি ছেলে

ত্রিশ বছর বয়স্ক একটি ছেলে আন্তরিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে তার অমরত্ব সম্পর্কে
ছেলেটি— যার সাদা ও কালো রঙে মেশানো ত্বককে দেখায় স্বর্গের মর্মর পাথরের মতো।

সেই ছেলেটির কথা বলছি—
যে নিশিরাতে গোরস্থানের সমাধিপ্রস্তরের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমার ওপর;
যেন হেঁটে যাচ্ছে সে স্বপ্নের ঘোরে রজনীর নিশিডাকে;

গাঢ় কৃষ্ণাভ প্রেক্ষাপটে কালো বর্গক্ষেত্রের আকৃতির মতো কে যেন দ্রুত
এসে দাঁড়ায় চোখের সামনে
ফের চলে যায় অন্ধকারের অন্তরালে।

++++ পুষ্পস্তবক

বাগানের মালির মেয়ে পলিনা ফুল এতো দারুণভাবে ভালোবাসে
যে, ফুলগুলো শুকিয়ে ঝরতে শুরু করেছে— তাদের যত্নআত্তিতে গাফিলতি হয় না তার কখনো। আমি যদি তাকে উপহার দেই একটি পুষ্পস্তবক,
সে রিবনের গিট খুলে তৎক্ষণাৎ মুক্ত করবে ফুলগুলোকে
তারপর মৃত্যুপথযাত্রী মানুষজনদের জন্য নির্ধারিত নার্সিংহোমে গিয়ে
ওইগুলো ভারি যত্নে সাজিয়ে রাখবে ফুলদানিতে। ফুলদানিতে ম্রিয়মান হতে থাকলে সে ছেটে দেয় ডাঁটি এবং সাবধানে শুষ্ক পাতাগুলো তুলে সরিয়েও রাখে।

ঝরে যাওয়া ফুল ও পাতাগুলো অতঃপর সে ফেলে দেয় জৈবসারের গর্তে
যে ফুল শুকিয়ে যায়নি সেগুলো জড়ো করে মেয়েটি তৈরি করে নতুন ফুলের সাজি, এক পর্যায়ে ঝরতে শুরু করে তারা একে একে : রজনীগন্ধা, চাঁপা ও গোলাপ ঝরে গেলে বাকি থাকে শুধু কেতকী, পপি ও গন্ধরাজ।
স্তবকের সর্বশেষ ফুলটিও যখন ঝরে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে জৈবসারের গর্তে
পালিনা— বাগানের মালির মেয়েটি তখন চোখ মুদে দেখে
ফুলদাতে আলো করে সৌরভ ছড়াচ্ছে অদৃশ্য পুষ্প।

পোলিশ থেকে এন্তোনিও লয়েড-জোনস-এর ইংরেজিতে অনুবাদের অনুসরণে

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field