যুদ্ধ কবিতা
ভূমিকা
যুদ্ধ মানবজাতির অভিশাপ, চিকিৎসা-অসাধ্য দুষ্টক্ষত, মর্মভেদী আর্তনাদ। কবিরা সাধারণত যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নেন। ‘যুদ্ধের কবিতা’ নামে কবিতার একটি বর্গই রয়েছে।
সম্প্রতি আমরা ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ উপলব্ধি করলাম। এই যুদ্ধের পটভূমিতে উল্লেখযোগ্য কবিতা এখনও আমাদের নাগালে আসেনি। যুদ্ধলিপ্ত এই দুই দেশের দুজন কবির ইতিপূর্বে রচিত দুটো যুদ্ধবিরোধী কবিতার অনুবাদ ও কবি পরিচিতি নিচে দেওয়া হলো।
কনভয়
ফরুগ ফার্রোখ্জাদ (Forugh Farrokhzad)
(ইরান : ১৯৩৫-১৯৬৭)

রাস্তায় রক্তের গন্ধ,
আর আকাশে ধোঁয়ার মেঘ…
শিশুরা পালাচ্ছে ভয়ে,
আর মায়েরা কাঁদছে নিঃশব্দে।
কে এইসব মৃত্যুর দাম দেবে?
কে জবাব দেবে রক্তের হিসাবের?
তোমাদের যুদ্ধের নামে
ধ্বংস হচ্ছে প্রজন্মের স্বপ্ন।
একদিন সব শেষ হবে,
ধ্বংসস্তূপের নিচে
শুধু পড়ে থাকবে
অন্ধকারের গল্প…
ফরুগ ফার্রোখ্জাদ (Forugh Farrokhzad) বিখ্যাত ইরানি কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সমাজকর্মী। তিনি আধুনিক ফারসি কবিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। নারী অধিকার, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তার কবিতার মূল বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : The Captive (১৯৫৫ – প্রথম কাব্যগ্রন্থ), The Wall (১৯৫৬), Rebellion (১৯৫৮)। Another Birth (১৯৬৪) তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ, যেখানে তিনি অধিকতর পরিণত শৈলীতে কবিতা লিখেছেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন এবং The House is Black (১৯৬২) নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ইরানি সিনেমার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে স্বীকৃত। কুষ্ঠ রোগীদের জীবন নিয়ে তৈরি শক্তিশালী চলচ্চিত্র।
১৯৬৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার অকাল মৃত্যু হয়। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার মৃত্যু ইরানি সাহিত্য ও শিল্পজগতের বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়। তার কবিতা ও শিল্পকর্ম নারী স্বাধীনতা ও মানবিক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছে।
‘কনভয়’ কবিতাটিতে যুদ্ধের প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে।
বোমার ব্যাস
ইহুদা আমিখাই (Yehuda Amichai)
ইসরায়েল (১৯২৪ – ২০০০)

বোমার ব্যাস ছিল ত্রিশ সেন্টিমিটার
আর এর প্রভাব বলয়ের ব্যাস সাত মিটার প্রায়।
আর তাতে চার জন মৃত ও এগারো জন আহত।
আর তাদের চারপাশে, ব্যথা আর সময়ের
একটি বৃহত্তর বৃত্তে ছড়িয়ে আছে
দুটি হাসপাতাল ও একটি কবরস্থান।
কিন্তু যে তরুণীকে তার নিজ শহরে কবর দেওয়া হয়,
যে শহর একশো কিলোমিটারেরও বেশি দূরে,
সে তো এই বৃত্তকে অনেক বাড়িয়ে দেয়।
আর সেই একাকী মানুষ যে তার মৃত্যুতে কাঁদে
কোনো দূর দেশের এক কোণে বসে,
সে তো সমগ্র পৃথিবীকে এই বৃত্তের মধ্যে নিয়ে আসে।
আর আমি উল্লেখও করব না সেই এতিমদের চিৎকার,
যা ঈশ্বরের সিংহাসন অবধি পৌঁছে তাকে ছাড়িয়ে যায়,
এই বৃত্তকে করে তোলে অসীম।
ইহুদা আমিখাই (Yehuda Amichai)(১৯২৪–২০০০) ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কবি। তার জন্ম জার্মানিতে, কিন্তু নাজি নির্যাতনের কারণে তিনি শিশু বয়সেই ফিলিস্তিনে (বর্তমান ইসরায়েল) চলে আসেন। তাঁর কবিতায় প্রেম, যুদ্ধ, ধর্ম ও মানবিক সংঘাতের গভীর অন্বেষণ দেখা যায়। তিনি হিব্রু ভাষায় কবিতা লিখতেন, কিন্তু তার রচনাগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমিখাইয়ের কবিতার শৈলী সহজ-সরল কিন্তু গভীর দার্শনিক ও মানবিক প্রশ্ন উত্থাপন করে।
আমিখাইয়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : Now and In Other Days (1955), Poems of Jerusalem (1987), Open Closed Open (1998)। তাঁর কবিতায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মিশেল দেখা যায়, যা তাকে আধুনিক হিব্রু কবিতার পথিকৃৎ করে তোলে।
ইহুদা আমিখাইয়ের “The Diameter of the Bomb” কবিতাটি ১৯৭০-এর দশকে (সঠিক বছর অনিশ্চিত) রচিত, সম্ভবত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে লেখা।
Leave feedback about this