বিশ্বসাহিত্য অনুবাদ গদ্য

কাফকার উত্তর | রোলা বার্থ | পার্থ গুহবক্স অনূদিত | কাফকা

আমরা অঙ্গীকৃত (Committed) সাহিত্যের সময় থেকে বেরিয়ে আসছি। সার্ত্রীয় উপন্যাসের সমাপ্তি, সামাজিক উপন্যাসের নিস্তেজ দারিদ্র্য, রাজনৈতিক নাটকের দোষত্রুটি সব মিলে ঢেউয়ের মতো সরে গিয়ে একটিমাত্র বিষয়কে তুলে ধরছে, সর্বপ্রতিরোধকারী সেই বিষয় হচ্ছে : সাহিত্য। ইতোমধ্যে তার ওপর আবার উল্টো আরেকটি ঢেউ ফিরে আসছে, নিশ্চিত বাধাহীন সেই ঢেউ। প্রেমের কাহিনিতে প্রত্যাবর্তন, ‘ধ্যানধারণার’ বিরুদ্ধাচরণ, সৎ লেখার (bien ecrire) আচার পদ্ধতি, জগতের তাৎপর্য খুঁজবার অস্বীকৃতি; সব মিলে শিল্পের এক নতুন নীতি উপস্থাপিত হচ্ছে যা রোমান্টিসিজম ও চপলতার মধ্যে, কবিতার (সামান্যতম) ঝুঁকি ও বিচারবুদ্ধির (ফলপ্রদ) আশ্রয়ের মধ্যে এক সুবিধাজনক ঘূর্ণিবাজি তৈরি করে।

তাহলে কি আমাদের সাহিত্য সবসময়ই রাজনৈতিক বাস্তববাদ এবং শিল্পের-জন্য-শিল্প, অঙ্গীকারের নীতি এবং নন্দনতত্ত্বের বিশুদ্ধতা, আপসে রফা এবং অজীর্ণতার ক্লান্তিকর যাতায়াতের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকবে? সে কি সবসময়েই রিক্ত (যদি সে নিজেই হয়ে ওঠে) বা বিহ্বল (যদি নিজের চাইতেও অন্যরকম) থাকবে? তাহলে কি কখনো ‘এই পৃথিবীতে’ তার কোনো জায়গা হবে না?

রোলা বার্থ

আজ এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর মিলবে মার্থ রোবেরের কাফকা গ্রন্থে (টীকা দ্রষ্টব্য)। কাফকা কী আমাদের উত্তর দেন? নিশ্চয়ই দেন (কেননা মার্থ রোবেরের চেয়েও আরও বেশি যত্নবান কোনো আলোচনার কথা ভাবা যায় না) কিন্তু তাকে বোঝা দরকার। কাফকা মানে কাফকাইজম নয়। কুড়ি বছর ধরে কাফকাইজম সবচেয়ে বিপরীতধর্মী সাহিত্যগুলিকে, কামু থেকে ইওনেস্কো পর্যন্ত, পুষ্টি জুগিয়ে এসেছে। আধুনিক যুগের আমলাতান্ত্রিক আতঙ্কের বর্ণনা সম্বন্ধে কি আর প্রশ্ন তুলতে হবে? ‘দ্য ট্রায়াল’, ‘দ্য ক্যাসল’, ‘দ্য পেনাল কলোনি’ সাধ্যাতীত শ্রমের আদর্শ তৈরি করেছে। বস্তুকে আক্রমণ করার মুখে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের দাবিপ্রকাশ কি সংশ্লিষ্ট? ‘দ্য মেটামরফোসিস’ একটি উপকারী চমক। কাফকার রচনা (oeuvre) বাস্তববাদী ও মন্ময় (subjective), তা সমস্ত জগতের প্রতি সমর্পিত হলেও কাউকে কোন উত্তর দেয় না। একথা সত্যি, আমরা তাঁকে বেশি প্রশ্ন করি না, কেননা তাঁর বিষয়ের ছায়ার উপর লিখবার জন্য কাফকাকে প্রশ্ন করা যায় না। মার্থ রোবের যা নিয়ে সুন্দর বলেছেন, নিঃসঙ্গ জীবন, বিপথগমন, অনুসন্ধান, বিমূর্ততার পরিচয়, সংক্ষেপে এইসব ধ্রুবক, যাদের আমরা কাফকার জগৎ বলে থাকি, তারা কি আমাদের সব লেখকের মধ্যে বিরাজ করে না, যখন তারা কর্তৃত্বপূর্ণ জগতের সেবার জন্য লিখতে অস্বীকার করেন? প্রকৃতপক্ষে কাফকার উত্তর তাদের উদ্দেশে নিবেদিত যারা তাঁকে সবচেয়ে কম প্রশ্ন করেছেন, যারা ‘শিল্পী’।

মার্থ রোবের আমাদের বলেন : কাফকার অর্থ তাঁর রীতির (technique) মধ্যেই আছে। আলোচনাটি একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে কেবল কাফকার নয়, আমাদের সমস্ত সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত। মার্থ রোবেরের মন্তব্য আপাতদৃষ্টিতে পরিমিত (কাফকার উপরে রচিত অশ্লীল জনপ্রিয় সংকলনগুলির মধ্যে এ বইটি কি সবার চেয়ে আলাদা নয়?) হলেও এটি সম্পূর্ণভাবে মৌলিক প্রবন্ধ যা মেধা এবং জিজ্ঞাসা অনুযায়ী সৃষ্ট হয়ে চেতনাকে উপযোগী ও অমূল্য পুষ্টি জোগায়।

কেননা যতই আপাতবিরোধী সত্য হোক না কেন, সাহিত্যের রীতিপদ্ধতির উপর কোনভাবেই আমাদের অধিকার নেই। যখন কোন লেখক তাঁর শিল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন (বিরল এবং বেশিরভাগই বিরাগজনিত), আমরা বড়জোর বলতে পারি তিনি কিভাবে জগৎ নিয়ে কল্পনা করছেন, তার সঙ্গে কোন সম্পর্ক তিনি স্থাপন করছেন, অর্থাৎ তাঁর চোখে মানুষ কিরকম, এককথায় প্রত্যেকেই বলবে তিনি বাস্তববাদী কিন্তু কিরকম; সাহিত্য কারণ এবং সমাপ্তিবিহীন কেবলমাত্র একটি পদ্ধতি, এখন এইভাবে নিঃসন্দেহে সংজ্ঞা দেওয়া যায়। তুমি সাহিত্যবিধির কোন সমাজবিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট হতে পার কিন্তু লেখার কাজকে কোন ‘কেন’ বা ‘কোনদিকে’ জিজ্ঞাসা করে কখনো সীমাবদ্ধ করতে পার না। লেখক একজন কারিগরের মতই কোনরকম আদর্শ বা ব্যবহার সম্বন্ধে অজ্ঞ থেকে Ashby-র মত অনুযায়ী আন্তরিকভাবে একটি জটিল বস্তুর বুননি তৈরি করেন।

কেন লেখা হয়, এই জিজ্ঞাসা অন্তত ‘প্রেরণা’র প্রসন্ন অজ্ঞানতা থেকে আরো উন্নতির লক্ষণ, কিন্তু এই উন্নতিও একরোখা, এর কোন উত্তর নেই। চাহিদা এবং সাফল্য হচ্ছে অভিজ্ঞতালব্ধ অন্যত্র সরে থাকবার ওজর (Alibis), যা পরিবর্তনশীল সত্যের থেকে অনেক বেশি জোরদার, এইসব বাদ দিলে সাহিত্যক্রিয়া কারণ ও সমাপ্তিবিহীন; কেননা তা যথার্থভাবে কোনরকম অনুমোদনের অপেক্ষা রাখে না; জগতের কাছে সে নিজেকে তুলে ধরে, সেজন্য কোন স্বীকৃত প্রথাকে (praxis) প্রতিষ্ঠিত বা যাচাই করতে হয় না, এই ক্রিয়া একেবারেই অকর্মক (intransitive), সে কোনকিছুকেই বদলায় না, কোনকিছুই তাকে ‘নতুন করে আশ্বস্ত’ করে না।

তাহলে? তাহলে এই হচ্ছে তার আপাতবিরোধী মত, এই ক্রিয়া নিজেকে নিঃশেষ করে তার রীতির মধ্যে, শুধুমাত্র কোন বিশিষ্ট পদ্ধতিতে তার অবস্থান। আবার সেই পুরনো প্রশ্ন : ‘কেন লেখালেখি?’ এর পরিবর্তে মার্থ রোবেরের ‘কাফকা’ এক নতুন প্রশ্নকে তুলে আনে : ‘কিভাবে লেখালেখি?’ আর এই ‘কিভাবে’ প্রশ্নটি ‘কেন’কে ক্ষইয়ে দেয়, হঠাৎ করেই কানাগলি খুলে যায়, এক সত্য আবির্ভূত হয়। এই সত্য, এই উত্তর কাফকার (যারা লিখতে চায়, তাদের জন্য) : ‘সাহিত্যের অস্তিত্ব তার নিজস্ব রীতি ছাড়া অন্য কোথাও নেই। ‘

মোটের ওপর এই সত্যকে যদি আমরা বাগর্থতত্ত্বের (semantic) ভাষায় প্রকাশ করি, তাহলে বলা যায় কোন রচনার বিশেষত্ব তার অন্তর্নিহিত সংকেতিত (signified) অর্থের মধ্যে থাকে না, (হে ‘উৎস’ এবং ‘ধ্যানধারণামূলক’ সমালোচনা, বিদায়) থাকে তার তাৎপর্যের (signification) ছাঁদের মধ্যে। কাফকার সত্য কাফকার জগতে নয় (বিদায় ‘কাফকাইজম’), জগতের সংকেতের (sign) মধ্যে রয়ে গেছে। কাজেই এই রচনা কখনো জগতের রহস্যের উত্তর দিতে পারে না। সাহিত্য কখনোই মতবাদমূলক নয়। জগৎ এবং তার মৌলিক উপাখ্যানের (legend) অনুকরণে (মিসেস রোবের যথার্থভাবেই তাঁর প্রবন্ধের একটি অধ্যায়কে মহৎ সাহিত্যের এক চূড়ান্ত ধর্ম ‘অনুকরণে’র উপর উৎসর্গ করেছেন) লেখক সংকেতিত ব্যতিরেকে কেবলমাত্র সংকেতকেই প্রকাশ করতে পারেন। জগৎ সবসময় ‘তাৎপর্যে’র প্রতি উন্মুক্ত হলেও ‘তাৎপর্য’ই তাকে অনন্তকাল ধরে অতৃপ্ত করে রাখে। লেখকের কাছে সাহিত্য হচ্ছে সেই বাচন যা আমৃত্যু ঘোষণা করে : বেঁচে থাকার অর্থ না জানা পর্যন্ত আমার জীবন শুরু হবে না।

কিন্তু সাহিত্য যে জগৎকে নিয়ে জিজ্ঞাসা ছাড়া আর কিছু নয়, এ ব্যাপারটি তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যদি আমরা জিজ্ঞাসার প্রকৃত রীতি সম্বন্ধে পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারি, কারণ জিজ্ঞাসাকে অবিরামভাবে কোন আপাত অস্তিবাচক কাহিনির মধ্যে বর্তমান থাকতে হয়। মার্থ রোবের খুব ভালো করেই দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমরা যেরকমভাবে প্রায়ই বলে থাকি, কাফকার কাহিনি সেই ধরনের প্রতীক দিয়ে বোনা হয় না, সে কিন্তু সম্পূর্ণ পৃথক এক রীতির ফসল, তা হলো পরোক্ষ উল্লেখের রীতি। পৃথকত্বের মধ্যেই কাফকার সমস্তটুকু আবদ্ধ হয়ে আছে। কোন প্রতীক (যেমন ক্রিশ্চিয়‍্যানিটির ক্রশ) একটি ‘নিশ্চিত’ সংকেত, তা আঙ্গিক ও ভাবনার মধ্যে (আংশিক) সাদৃশ্যকে সমর্থন করে, নিশ্চয়তাকে সে প্রকাশ করে। কাফকার চরিত্র এবং ঘটনাগুলি যদি প্রতীকী হতো, তবে তারা সর্বজনীন মানুষের কাছে (এমনকি নিরাশ হলেও) কোন প্রত্যক্ষ দর্শনের (positive philosophy) উল্লেখ করত। কোন প্রতীকের অর্থ নিয়ে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য ঘটতে পারে না যে অর্থের অনুপস্থিতিতে প্রতীক ব্যর্থ হয়ে যায়। কাফকার কাহিনি এই ধরনের একই রকম হাজারো আপাতযুক্তিসংগত চাবির দায়িত্ব দিয়ে দিলেও এখন বলা যায় তার কোন বৈধত্ব নেই।

আবার পরোক্ষ উল্লেখ সম্পূর্ণ অন্য একটি ব্যাপার। নিজেকে বাদ দিয়ে কল্পিত ঘটনাকে সে অন্যদিকে পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু-কোথায়? পরোক্ষ উল্লেখ হল একটি ত্রুটিপূর্ণ শক্তি, যখনই তার সামনে সাদৃশ্যসূচক কিছু রাখা হয়, সে তাকে বাতিল করে। বিচারালয়ের আদেশে K-কে গ্রেপ্তার করা হল; এটি ন্যায়পরায়ণতার পরিচিত ছবি। কিন্তু আমরা শিখলাম যে ওই বিচারালয় আমাদের ন্যায়পরায়ণতার চোখে অপরাধকে বিচার করে না। মুছে না ফেললেও এই সাদৃশ্য বিভ্রান্তিজনক। মার্থ রোবের সংক্ষেপে এইভাবে ব্যাখ্যা-করেছেন, সবকিছুই এক ধরনের বাগর্থতাত্ত্বিক সংকোচন থেকে এগিয়ে যায় : K-র মনে হয় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর সবকিছু এমনভাবে ঘটে ‘যেন সত্যি সত্যি’ K-কে প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে (The Trial), কাফকাকে তাঁর বাবা পরগাছার মতো দেখতেন আর সবকিছু এমনভাবে ঘটে ‘যেন সত্যি সত্যি’ কাফকাকে পরগাছায় বদলে যেতে হলো (The Metamorphosis)। কাফকা সুশৃঙ্খল প্রণালীতে ‘যেন সত্যিকে’ লুকিয়ে রেখে সাহিত্যসৃষ্টি করেছেন কিন্তু এই হচ্ছে ভেতরের অন্তর্নিহিত ঘটনা যা কিনা পরোক্ষ উল্লেখের অস্পষ্ট অর্থ হয়ে ওঠে।

তাহলে দেখতে পাচ্ছি তাৎপর্যের একটি নিছক রীতির পরোক্ষ উল্লেখ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সমস্ত জগতের প্রতি কোন অঙ্গীকার, যেহেতু সে একটি একক মানুষ এবং একটি সাধারণ ভাষার মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে : একটি ‘পদ্ধতি’ (সমস্ত অ্যান্টিইন্টেলেকচুয়ালিজমের ঘৃণ্য অপচ্ছায়া) আমাদের পরিচিত সাহিত্যের মধ্যে সবথেকে জলন্ত এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। উদাহরণ হিসেবে (মার্থ রোবের মনে করিয়ে দেন) চট করে বলা যায় একটা কুকুরের মতো, একটা কুকুরের জীবন, একটা ইহুদি কুকুর, মন্ময়তাকে পরোক্ষ উল্লেখের রাজ্যে বদলে দিয়ে রূপকাত্মক অর্থকে খুব ভালভাবেই সমগ্র কাহিনি বর্ণনার মূল বিষয় করে তোলা যায়, যাতে একটি অপমানিত মানুষ হুবহু একটি কুকুর হয়ে ওঠে, কুকুরের মতো ব্যবহারপ্রাপ্ত একটি মানুষ ‘হচ্ছে’ একটি কুকুর। এইভাবে কাফকার রীতি প্রথমে জগতের সঙ্গে এক সমঝোতার ফল হিসেবে প্রকাশ পায়, যা চলতি ভাষার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে, কিন্তু ঠিক তারপরেই জগতের দ্বারা উপস্থাপিত সংকেতগুলির আক্ষরিক অর্থের সামনে আসে মনোভাব গোপন, সন্দেহ, আতঙ্ক। মার্থ রোবের চমৎকার ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে : কাফকা এবং জগতের মধ্যে সম্পর্ক পরিচালিত হচ্ছে এক চিরস্থায়ী ‘হ্যাঁ, কিন্তু…’ মারফৎ, যার সাফল্যের ফলে এটিকে পরিষ্কারভাবে আমাদের সর্বাধুনিক সাহিত্য বলা যায় (এবং প্রকৃতপক্ষে কাফকাই একে সৃষ্টি করেছেন) যেহেতু তা অননুকরণীয়ভাবে বাস্তববাদী পরিকল্পনা (জগৎকে ‘হ্যাঁ’ বলা) এবং নীতিবাদী পরিকল্পনার (কিন্তু…) মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। যে দূরত্ব ‘কিন্তু’র থেকে ‘হ্যাঁ’কে আলাদা করে রাখে তা হলো সংকেতগুলির সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তা, তার কারণ সেখানে কোন সাহিত্য আছে কি না সে ব্যাপারে সংকেতগুলি অনিশ্চিত। কাফকার রীতি বলে, জগতের অর্থ উচ্চারণেরও অযোগ্য; শিল্পীর একমাত্র কর্তব্য সম্ভাব্য তাৎপর্যগুলির অনুসন্ধান চালানো যাদের প্রত্যেকটিকে আলাদাভাবে দেখলে কেবল (প্রয়োজনীয়) অসত্য ধরা পড়বে, কিন্তু যাদের বিবিধত্ব লেখকের মতো সত্য। এই হলো কাফকার আপাতবিরোধী মত : শিল্প নির্ভর করে সত্যের ওপর কিন্তু সত্য অবিভাজ্য হওয়ার ফলে নিজেকে জানতে পারে না, সত্য ‘বলা’ মানে মিথ্যা কথা। তাহলে লেখক ‘হচ্ছেন’ সত্য, তবু যখন তিনি বলেন, তিনি মিথ্যে বলেন : কোন সাহিত্যধর্মের কর্তৃত্ব তার নান্দনিকতার মাত্রায় কখনো অবস্থান করে না, করে তার নৈতিক অভিজ্ঞতার মান অনুযায়ী সেটিকে অনুমিত মিথ্যায় পর্যবসিত করে, কিংবা কাফকা যেমন কিয়ের্কেগার্দকে সংশোধন করে বলেন : গর্বহীনভাবে শুধুমাত্র নৈতিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা অস্তিত্বের নান্দনিক উপভোগ্যতায় পৌঁছাই।’

কাফকার পরোক্ষ উল্লেখের পদ্ধতি অন্যান্য সংকেতগুলিকে জিজ্ঞাসা করবার জন্য এক বিশাল সংকেত হিসেবে কাজ করেছে। এখন তাৎপর্যপূর্ণ পদ্ধতির অনুশীলনের (উদাহরণ হিসাবে অংক যেমন সাহিত্য থেকে অনেক দূরে) কেবল একটি মাত্র প্রয়োজনীয়তা আছে যা কিনা নিজে নিজেই নান্দনিক প্রয়োজন হয়ে উঠবে : উগ্রতা। যে কোন ত্রুটি এবং দ্বিধা, পরোক্ষ উল্লেখরীতির নির্মাণে আপাতবিরোধী মতানুসারে নানা প্রতীকের সৃষ্টি করত, তারা সাহিত্যের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাত্মক কাজের জন্য একটি নিশ্চয়াত্মক ভাষাকে প্রতিকল্প হিসেবে স্থাপন করেন। উপন্যাসের প্রকৃত অনুসন্ধানকারীদের প্রতি আবার কাফকার উত্তর : অবশেষে এই হচ্ছে লেখার যধার্থতা, (অবশ্যই সংগঠনরীতির/structural যথার্থতা, অলঙ্কারশাস্ত্রের (rhetorical) নয় : এখানে ‘সৎ লেখা’র কোন ব্যাপার নেই যা জগতের কাছে লেখককে অঙ্গীকার করায় কোনরকম স্বেচ্ছানির্বাচনে নয়, তার নিজের সেই স্বপক্ষত্যাগে : যার কারণ জগৎ ‘শেষ’ হয়নি, যে কারণে সাহিত্য এখনো সম্ভবপর।

টীকা
Marthe Robert: Kafka, Gallimard, 1960, Coll. Bibliotheque ideale.

    Leave feedback about this

    • Rating

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field