অনন্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী
শেষ পর্ব
জয়নুলে মুগ্ধতা
জয়নুল আবেদিনের ড্রয়িং প্রথমে আকৃষ্ট করে কাইয়ুম চৌধুরীকে, তখন তিনি স্কুলের ছাত্র। কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদ, সাপ্তাহিক মিল্লাত প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত ড্রয়িংয়ে শ্রমজীবী মানুষ ও বাংলার প্রকৃতির এমন সুন্দর ছবি সৃষ্টি হতো যা তাঁর মন কেড়ে নিত। রেখার পরিমিত ব্যবহার ও তুলির সাবলীল গতির মধ্যে দূর নিকটের অভিঘাত অদ্ভুত ব্যঞ্জনার জন্ম দিত। দূরগ্রামের সীমান্তরেখায় একপায়ে দাঁড়ানো দুটি তালগাছ, গ্রীষ্মের বাতাসে আন্দোলিত বিস্তৃত ধানক্ষেত আর সেই ক্ষেতের আল বেয়ে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে ছুটে চলা গ্রাম্যবালিকার ছবি – মাত্র দুটি তুলির টানে – কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে ম্যাজিক মনে হতো। রঙের রানি কালো, কাইয়ুমের কাছে জয়নুল ‘কালো রঙের কবি’। আর্টস্কুলের ড্রয়িং ক্লাসে কাইয়ুম চৌধুরীর গরুর বাছুর আঁকার প্রয়াস দেখে শিক্ষক জয়নুল বললেন, ‘গরু ছোট করে আঁকলেই বাছুর হয় না।’ এরপর নিজেই এঁকে দেখিয়েছেন বাছুরের পা হবে হরিণের পায়ের মতো সরু। আর্টস্কুলের ছাত্র থাকাকালে কাইয়ুম চৌধুরী জয়নুলের নিবিড় প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের গুরুত্বকে উপলব্ধি করেন। তাঁর চোখে জয়নুলের দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছবি। যুদ্ধকালীন দুর্মূর্ল্যের বাজার এবং দুষ্প্রাপ্যতার কারণে ঈষৎ হলুদ রঙের মোটা প্যাকেজিং কাগজে মোটা তুলিতে শুধু কালোরঙে তিনি আঁকেন মানবেতিহাসের জঘন্যতম দুর্দশার চিত্র। এসব ড্রয়িংয়ে কাইয়ুম লক্ষ করেছেন অসাধারণ পরিমিতিবোধ, আলোছায়ার সাজুয্য এবং স্পেসের যথাযথ বিভাজন। জয়নুলের অঙ্কনের গভীর প্রভাব কাইয়ুমকে শক্তি জুগিয়েছে।
মহান এই শিল্পীর ভালবাসাও তিনি পেয়েছেন চমৎকার ও উদ্ভাবনী সব গ্রাফিক্স ও চিত্রকলার জন্য। এর প্রমাণ জয়নুল আবেদিন দুবার, ১৯৫৮ ও ১৯৬৫ সালে তাঁকে চারুকলার গ্রাফিক্স বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত করেছেন। আর্টস্কুল ততদিনে মহাবিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে।
প্রীতিকর কামরুল
কামরুল হাসানের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল আজীবন। তাঁর রেখাঙ্কন, কাজের ধরন, লোকশিল্পের আধুনিক প্রয়োগ পদ্ধতির প্রতি তুমুল শ্রদ্ধা ছিল কাইয়ুমের। কামরুলের ড্রয়িংয়ে তিনি লক্ষ করেছিলেন তুলির স্বাভাবিক গতি, দৃঢ় রেখার লীলায়িত ছন্দ। কাগজে পেন্সিল কিংবা কালি ও কলমের নরম আড়াআড়ি টানে আলো-আধারির সৃষ্টি কী জীবন্ত রূপ ধারণ করত তা দেখে বিস্মিত হতেন। জলরঙে মোটা তুলিতে স্বচ্ছ রঙের আবরণ টেনে হালকা থেকে পরতে পরতে দ্রুত ছবি ফুটিয়ে তুলতে কামরুল হাসানের জুড়ি ছিল না। শিল্পী কামরুল হাসান ও ব্যক্তি কামরুল হাসানের প্রতি এতই মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল যে, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাইয়ুম ১৯৬০ সালে চারুকলার শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে তাঁরই সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন নকশাকেন্দ্রে। তবে প্রকাশনাকেন্দ্রিক গ্রাফিকসের কাজেই তাঁর আগ্রহ থাকায় তিনি এ জগতেই ফিরে আসেন।
পথিকৃৎ যামিনী রায়
রেমব্রাঁ
সতেরো শতকের ওলন্দাজ শিল্পী রেমব্রাঁর আত্মপ্রতিকৃতিতে ফুটে উঠেছে তাঁর জীবনের ধারাবাহিক ভাষ্য। জীবনযুদ্ধের ক্ষতচিহ্নগুলো প্রতিকৃতিতে যেভাবে বিধৃত হয়ে আছে সেসব পাঠের মধ্য দিয়েই কাইয়ুম চৌধুরী একজন শিল্পীর যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছেন। লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে মূল ছবিতে তিনি লক্ষ করেছেন রেমব্রাঁর নির্মাণকৌশলের নিপুণতা। আলোছায়ার প্রয়োগকৌশল, অবয়বের কাঠামোগত সংস্থাপন, ডিটেইলিং, বিরচন কৌশল, সংযত উপস্থাপনা প্রভৃতির যথার্থতায় আত্মপ্রতিকৃতিগুলো যে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে, কাইয়ুম চৌধুরীর দৃষ্টি সেদিকেও নিবদ্ধ হয়েছিল। একজন বিশ্ববরেণ্য শিল্পীর বৈচিত্র্যময় জীবনরস ও শিল্পনিপুণতা থেকে উত্তাপ গ্রহণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। ‘নিজের মুখোমুখি রেমব্রাঁ’ শীর্ষক রচনায় (১৯৯৪) এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফ্রান্সিসকো গোইয়া
পাশ্চাত্যশিল্পকে অগ্রসর করায় বড় অবদান রেখেছেন স্পেনের শিল্পী ভেলাসকুয়েথ (১৫৯৯-১৬৬০), গোইয়া (১৭৪৬-১৮২৮), পিকাসো (১৮৮১-১৯৭৩) প্রমুখ। এঁদের মধ্যে গোইয়া কাইয়ুমের প্রিয় তাঁর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। গোইয়ার স্বপ্ন ছিল একটা সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর। স্পেনের অভিজাত শাসকগোষ্ঠীর শ্রেণিস্বার্থসংশ্লিষ্ট জীবনযাপন, স্বভাবজাত ক্রূরতা ও হিংস্রতার বিরুদ্ধে তাঁর শিল্প ছিল প্রতিবাদমুখর। যুদ্ধের বীভৎসতা, লণ্ঠন, ধর্ষণ প্রভৃতির বিষয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন নিজের সৃজনশীলতার মাধ্যমে। বিশ্বশিল্পে ছাপাই ছবির ক্ষেত্রে গোইয়ার অবদান অবিসংবাদিত।
মাদ্রিদের প্রাদো মিউজিয়ামে ২০০২ সালে কাইয়ুম দেখেন গোইয়ার ‘দ্য ফায়ারিং পার্টি, ৩ মে, ১৮০৮’। ফরাসি দখলদার বাহিনীর ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে স্পেনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই চিত্রটির মূলভাষ্য পাঠ করে কাইয়ুম ফিরে যান আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। গোইয়ার মতাদর্শ ও তাঁর চিত্রকর্ম কাইয়ুমকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
ছাত্রাবস্থায় ভ্যান গঘের (১৮৫৩-১৮৯০) ‘পটেটো ইটারস’ কাইয়ুম চৌধুরীকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। হল্যান্ডের দরিদ্র আলুচাষি পরিবারের নৈশভোজের দৃশ্য এটি। লণ্ঠনের স্বল্প আলোয় আলো-আঁধারির নীলাভ বৈপরীত্যের মাঝে শ্রমজীবী মানুষের কর্কশ উপস্থিতি বাস্তবধর্মী হলেও ড্রয়িং ও উপস্থাপনায় ভ্যান গঘের নিজস্ব শৈলীর ছাপ নিয়ে ছবিটি অসাধারণ। এজন্যই এটি শিক্ষার্থীশিল্পী কাইয়ুমকে মোহিত করেছিল।
১৯৫৮ সালে কলকাতায় বেড়াতে যেয়ে দেখেন গঘের জীবন অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ভিনসেন্ট মিনেলি পরিচালিত ‘লাস্ট ফর লাইফ’। এই ছবি দেখে ভ্যান গঘের জীবনের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তিনি।
১৯৭৭ সালে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে ভ্যান গঘের মূল চিত্র দেখার সুযোগ ঘটে কাইয়ুম চৌধুরীর। ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের কক্ষে ঢুকে শুরুতেই দেখতে পেলেন গঘের ‘রাস্তার পাশে সাইপ্রেস গাছ’ চিত্রটি। ওপরে জ্বলন্ত সূর্য, ছুটন্ত মেঘ, তুলির বলিষ্ঠ মোচড়ানো সমান্তরাল আঁচড়, নীল- হলুদের উজ্জ্বলতা নিয়ে এক অসাধারণ চিত্র। গঘের ছবিতে চোখধাঁধানো রং। এর পরিচ্ছন্নতা দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, ভ্যান গঘ বুঝি এই মাত্র ছবি আঁকা শেষ করে উঠে গেলেন।
ভ্যান গঘের বিখ্যাত ছবি ‘সূর্যমুখি’ (১৮৮৮) ও তাঁর অন্যান্য কাজ দেখে বোঝা যায় হলুদ ও নীল তাঁর বিশেষ প্রিয় রঙ। মহান এই শিল্পীর মৃত্যুশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে ১৯৯০ সালের ২৭ জুন দৈনিক সংবাদের সাময়িকীতে কাইয়ুম চৌধুরী লিখেন ‘ভিনসেন্টকে আমাদের ভালবাসা’ শীর্ষক প্রবন্ধ। কাইয়ুম চৌধুরী নিজের শিল্পাদর্শে ভ্যান গঘকে কতটা আত্মীকৃত করেছেন, তা তাঁর ছবির দিকে তাকালেই উপলদ্ধি করা যায়।
কাইয়ুমের উল্লেখযোগ্য একক চিত্রপ্রদর্শনী
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পূর্বাপর আঁকা ১১১টি চিত্রকর্মের বিশাল প্রদর্শনী। পয়তাল্লিশটি ছবি ছিল স্বাধীনতার আগের। প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক ছয়টি তেলরঙ চিত্র স্থান পায়। এগুলো হলো বাংলাদেশ ৭১, গণহত্যা, দগ্ধগ্রাম, শহিদ ৭১, মৃত জেলেরা, জ্বলন্ত ঘাট। আর ছিল ‘শৈশব স্মৃতি` পর্যায়ের দশটি তেলচিত্র।
এই পর্বের ছবি নিয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর লিখেছিলেন, ‘১৯৭৫ থেকে তাঁর কাজ মোড় নেয়, বদলে যেতে থাকে। লোকরীতি, জ্যামিতিকতা বাদ দিয়ে তিনি খুঁজে পান নিজের স্ট্যাইল, যার সন্ধান তিনি করছিলেন বিভিন্ন পর্বে। ‘শৈশব স্মৃতি’ নামক এক থেকে দশসংখ্যক কাজে তিনি স্পেস ব্যবহার করেছেন, স্পেসকে চিত্রের একটা গুণ হিসেবে দেখেছেন নানা ফর্ম, ডিজাইনে না ভরে। এখানে রঙ সংক্ষিপ্ত করে এনেছেন, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার ভুবন থেকে। সেজন্য তাঁর এই পর্বের কাজ নিয়ন্ত্রিত, বাহুল্যহীন, রং চড়া, চিত্রে স্পেসের উদ্ভাস নিশ্চিত ও সুস্পষ্ট; তিনি লোভ ছেড়েছেন নয়নলোভন অসংখ্য ফর্ম ও ডিজাইন চিত্রজুড়ে ছড়ানোর। তাঁর আয়ত্ত্বে এসেছে সরলতা, ফর্মের কেন্দ্রিকতা।’
১৯৭৭ সালেই তিনি শিল্পকলা একাডেমি পদকে ভূষিত হন।
১৯৭৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী দর্শক, শিল্পী, শিল্পসমঝদারের কাছে এবং সংবাদপত্রে বিপুল প্রশংসিত হয়, যা তাঁর জন্য অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছিল। তিনি ছবি আঁকায় আরও নিবিষ্ট হন এবং আগের চেয়ে কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। শৈশব স্মৃতির পর ‘জলমগ্ন গ্রাম’ সিরিজ চিত্রায়ণ করেন। এই পর্যায়ের চিত্রমালায় শৈশব স্মৃতির বিমূর্তায়ন নেই, স্পেস ও রঙের ব্যবহারের ধারাবাহিকতা থাকলেও বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে গ্রামীণ দুর্গতি তাঁর ছবিতে নকশার অবয়বে ফুটে উঠতে থাকে, তবে ভিন্নভাবেই ঘটে এই উদ্ভাসন।
১৯৯৯ সালে শিল্পাঙ্গনের আয়োজনে তাঁর তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দেশে আয়োজিত প্রদর্শনী হিসেবে ওটি তার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী। ১৯৭৭ সালে মার্কিনমুলুকে সস্ত্রীক বেড়াতে যেয়ে ওয়াশিংটনে ছোট আকারে তাঁর কাজের একটি প্রদর্শনী হয়।
শিল্পাঙ্গনে তাঁর ১২৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তেলরঙ ছাড়াও জলরঙ, গোয়াশ, কালি ও কলমে অঙ্কিত কাজের এই প্রদর্শনীতে আমরা পেলাম পরিণত প্রাজ্ঞ চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীকে। ছবির বিষয় প্রধানত গ্রাম-প্রকৃতি ও গ্রামীণ মানুষ। পূর্বের কাজের নকশা ও রেখার চেয়ে এসব কাজে রঙের প্রয়োগ প্রধান হয়ে উঠেছে লোকজ আঙ্গিকের আধুনিক প্রয়োগে। চিত্রপটে এসেছে নমনীয়তা ও পেলবতার মুগ্ধতা। এ সময়কার সৃজনে কাইয়ুম একদিকে পরিণত অন্যদিকে তারুণ্যে দীপ্ত।
ঢাকায় কাইয়ুম চৌধুরীর চতুর্থ একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় বেঙ্গল শিল্পালয়ে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত।
অন্যান্য ঝোঁক
চারুশিল্পের পাশাপাশি চলচ্চিত্র, শুদ্ধসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি অসম্ভব টান ছিল তাঁর। ছেলেবেলা থেকেই সিনেমা দেখার খুব ঝোঁক ছিল কাইয়ুমের। পাকিস্তান আমলে প্রচুর বিদেশি সিনেমা আসত। রোমান হলিডে নামে হলিউডের এক চলচ্চিত্র তাঁর তারুণ্যকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল। এর নায়ক গ্রেগরি পেক ও নায়িকা নবাগত অড্রে হেপবার্ন। সেই তারুণ্যে মনে হতো যেন গ্রেগরি তাঁর সঙ্গেই আছেন! ১৯৮৯ সালে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে অড্রে হেপবার্ন বাংলাদেশ সফরে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে আয়োজিত হয়েছিল ইউনিসেফের একটি পোস্টার প্রদর্শনী। এক দুপুরে অড্রে এলেন প্রদর্শনী উদ্বোধন করতে। প্রবীণ বয়সে প্রিয় নায়িকার সঙ্গে দেখা ও পরিচিত হওয়ার এই অনন্য সুযোগ কাইয়ুমকে আপ্লুত করেছিল। সৌভাগ্যবশত ওই সময় এই লেখকও গ্যালারিতে উপস্থিত ছিল।
ছড়া ও কবিতা লেখাতেও বিশেষ পারদর্শিতা ছিল তাঁর, এসবের প্রকাশনাও আছে। স্মৃতিচারণা করেছেন, শিল্পী ও শিল্প সম্পর্কে লিখেছেন বিদগ্ধ রচনা।
এলপি অ্যালবাম সংগ্রহে তিনি ছিলেন দেশসেরা। এই নেশা আহরণ ছিল তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি ভলোবাসা জানিয়েই ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর রাতে ৮২ বছর বয়সে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব-মঞ্চে মহান এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মরণে ২০১৫ সালের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী শেষজীবনে যুক্ত হয়েছিলেন বরেণ্য সংস্কৃতিজন ওয়াহিদুল হক প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি, শুদ্ধ উচ্চারণের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের সঙ্গে। তিনি এর সভাপতি হিসেবে বাঙালির শুদ্ধসত্তা নির্মাণ আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
স্বাধীনতা পুরস্কার- ২০১৪
একুশে পদক-১৯৮৬
তথ্যসূত্র
১. কাইয়ুম চৌধুরী, মফিদুল হক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশিত আর্ট অব বাংলাদেশ সিরিজ-৬, ২০০৩।
২. কাইয়ুম চৌধুরী : শিল্পীর একান্ত জীবন কথা, সৈয়দ আজিজুল হক, প্রথমা, ২০১৫।
পূর্বের পর্ব

