Site icon তীরন্দাজ

আমার বাবা মুনীর চৌধুরী : আদর্শ শিক্ষকের প্রতিকৃতি | আসিফ মুনীর | প্রবন্ধ

সম্পাদকীয় নোট

আজ ২৭ নভেম্বর লেখক, নাট্যকার, শিক্ষক মুনীর চৌধুরীর জন্মশতবর্ষের বিশেষ দিন। জীবদ্দশাতেই তিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁরা তাঁর কৃতিত্বের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে এখনও স্মরণ করেন। আজ এ উপলক্ষ্যে তীরন্দাজে মুনীর চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র আসিফ মুনীরের এই লেখাটি প্রকাশিত হলো। উল্লেখ্য, আসিফ তখন খুবই ছোট, ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, বাবাকে শিক্ষক হিসেবে কী চোখে দেখেন সেকথাই এখানে বলেছেন।

শৈশব থেকে আমরা লেখাপড়া নিয়ে কিছু প্রবাদ-প্রবচন শুনে বড় হই। যেমন ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’, ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে।’ আবার মাঝে মাঝে কোন বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি আমাদের মনে ধরে যায়, যেমন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়; যা কেবল ইন্ধন দেয় না, অগ্নি দেয়।’ আবার উপমহাদেশের প্রাচীন পণ্ডিত চাণক্য বলেছিলেন, ‘বিদ্বান সকল গুণের আধার, অজ্ঞ সকল দোষের আকর। তাই হাজার মূর্খের চেয়ে একজন বিদ্বান অনেক কাম্য।’জাপানি প্রবাদ আছে, ‘শেখাতে গেলেই শেখা হয়।’ পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক, প্রকৃতি ও প্রাত্যহিক জীবনযাপন থেকে আমরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আজীবন শিখি।
শিক্ষা নিয়ে এই অবতারণা এক বহুমুখী প্রতিভাধর শহীদ বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক মুনীর ¬¬¬¬ শিক্ষক স্বরূপ নিয়ে। যদিও তাঁর সমসাময়িক বন্ধু-ছাত্র-গুণমুগ্ধদের কাছে মুনীর চৌধুরীর সবচেয়ে বেশি সফলতা আধুনিক বাংলা নাটকের জনক হিসেবে, শিক্ষক হিসেবেও তাঁর অনবদ্য সাফল্যের কথা বলেন ও বলেছেন যাঁদের তাঁর ক্লাস করার সৌভাগ্য হয়েছে। কৈশোর থেকে পরিণত বয়স, এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি গদ্যসাহিত্য, নাটক, বাংলা ভাষা, ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পাঠ ছিল মুনীর চৌধুরীর নেশা। অন্যদিকে তরুণ বয়স থেকেই তিনি বাগ্মী হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। মুনীর চৌধুরীর ছাত্র, শিক্ষক, বন্ধু, অনুরাগী – সবাই শ্রেণিকক্ষে মুনীর চৌধুরীর পাঠদান এবং রাজনৈতিক, সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক সমাবেশে বক্তৃতাগুলি কতটা মনোমুগ্ধকর ছিল, সে সম্পর্কে বলেছেন এবং লিখেছেন। অগাধ পড়াশোনার মধ্য দিয়ে অর্জিত পাণ্ডিত্যকে শাণিত করেছিল তাঁর বক্তব্যের যুক্তিবোধ ও শব্দচয়ন। শ্রেণিকক্ষ, রাজনৈতিক মঞ্চ বা সাংস্কৃতিক কোনো অনুষ্ঠান, সবখানেই আগেভাগে তার চিন্তা ও বক্তব্যকে তিনি সংগঠিত করতেন এবং লিখিত নোট নিতেন। তাৎক্ষণিক বক্তব্য প্রকাশেও পারদর্শী ছিলেন মুনীর চৌধুরী। তবে ক্লাস বা আনুষ্ঠানিক কোনো আয়োজনের পূর্ব-প্রস্ততি ছিল মুনীর চৌধুরীর জন্য অবধারিত।
শ্রোতাদের বিমোহিত করার শিল্পও জানতেন মুনীর চৌধুরী, তাঁর শ্রোতা তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন বা না হন। তিনি নাটক ভালাবাসতেন বলেই হয়তো শ্রেণিকক্ষ থেকে সভা সমাবেশ বা টেলিভিশনেও শুধু যে তাঁর বক্তব্য গুছিয়ে প্রকাশ করতেন তা নয়, প্রয়োজন অনুযায়ী কোন কোন শব্দের ওপর জোর দিতেন, যতিচিহ্ন ব্যবহার করতেন আর বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেন। বাংলা ও ইংরেজিসাহিত্যে প্রচুর পড়াশোনা থাকায় এই দুই ভাষাতেই তাঁর শব্দের ভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। এমনকি তাঁর গলার স্বর কিছুটা ফ্যাশফ্যাশে হওয়ার পরও বিষয়বস্তুর উপস্থাপন, উদাহারণসহ যুক্তিস্থাপন, কণ্ঠের উত্থানপতন, শব্দচয়ন – সব মিলিয়ে তাঁর শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন। পাঠদানের মধ্যে তিনি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যের নানা উদাহারণ টেনে আনতেন এবং অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতেন। অনেকেই তাদেরস্মৃতিচারণে বলেছেন, অন্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো এই জীবন্ত কিংবদন্তির ক্লাস শুনতে আসতেন। কথিত আছে, মুনীর চৌধুরীর ছাত্রছাত্রীরা যারা পরে শিক্ষকতা করেছেন, তাঁরা মুনীর চৌধুরীর শিক্ষকতা ও পাঠদানের ধরন অনুসরণের চেষ্টা করতেন। মুনীর চৌধুরীর প্রতি তাঁদের এই ভালোবাসা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মহিমাকে নান্দনিক করে তুলেছে।
সম্ভবত মুনীর চৌধুরীর বাবার শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিবারের চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা একজন ‘সেল্ফ মেড ম্যান’। সরকারি চাকরির পাশাপাশি সর্বশেষ আবাসস্থল ঢাকার বাড়িতেই ছিল সমৃদ্ধ পাঠাগার। ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছে বাড়িতেই, স্কুলে ভর্তি হয়েছেন পরে। জন্মদিনে সন্তানদের জন্য বাবার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে থাকত বাছাই করা দেশি-বিদেশি বই। মুনীর চৌধুরীকে নিয়ে পিতার স্বপ্ন ছিল এই সন্তান তাঁর মতোই সরকারি চাকরি করবে। এ কারণে তিনি তার সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন ভারতের সম্ভ্রান্ত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কলেজ পড়ুয়া মুনীর তখন বিশ্বসাহিত্যের স্বাদ লাভ পেয়ে গেছেন। প্রথাগত পাঠ্যপুস্তক আর তাঁকে প্রথাগত চাকরি জীবনের দিকে নিয়ে যায়নি। তাঁর বাবাই হয়তো মুনীর চৌধুরীর মধ্যে পাঠ ও জ্ঞানার্জনের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও সন্তান পিতার দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটেননি। পারিবারিক জীবনে তাঁদের মধ্যে এজন্য দূরত্বও সৃষ্টি হয়েছিল, যদিও একসময় আবদুল হালিম চৌধুরী মুনীর চৌধুরীর জ্ঞানস্পৃহাকে সম্মান ও স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সারাজীবন ঘরে-বাইরে মুনীর চৌধুরী পড়া, লেখা, আলোচনা সভা, ক্লাস নেওয়া – এসবের মধ্যেই জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছেন।
অনেক বিশ্লেষক ও অনুসারীদের মতে মুনীর চৌধুরী পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে প্রথম পছন্দ হিসেবে গ্রহণ করতে চাননি। যদি পারতেন, শুধু পড়তেন, গল্প-নাটক লিখতেন, নাটকের নির্দেশনা দিতেন। কিন্তু পারিবারিক জীবনের বাস্তবতায় তাঁকে কোন একটি পেশা গ্রহণ করতেই হতো একসময়। তখন বা এখনও সৃষ্টিশীল কাজকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা দেখি, মুনীর চৌধুরীর বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষকতার ধারাবাহিকতা ছিল। সেদিক থেকে মনে হয়, অন্য যে কোনো পেশার চেয়ে শিক্ষকতা মুনীর চৌধুরীর জন্য সহজাত পেশা ছিল। কর্মক্ষেত্রেও তাঁর অবদান সাদরে গৃহীত হয়েছিল। প্রথম যৌবনে লিলি চৌধুরীকে বিয়ে করার পরপরই খুলনার ব্রজলাল কলেজে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। তারপর ১৯৫০ সালে ঢাকায় এসে খুব অল্প সময় ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। এরপর ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ইংরেজি বিভাগে এবং পরে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করে গেছেন প্রায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে। মাঝে কিছু সময় শুধু ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য কারাবরণ (১৯৫২ থেকে ১৯৫৪) আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাতত্ত্বের ওপর পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন (১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮)। কারাবরণ বা বিদেশ গমনের সময় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়তে হয়েছিল,। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষকতা যেমন ছাত্রছাত্রীদেরকে তাঁর পাণ্ডিত্য ও পাঠদানের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি শিক্ষকতাসহ অন্যান্য সৃষ্টিশীল কাজে তাঁকে স্থিতিশীল করেছে।
বাংলা সাহিত্যের অনেক অধ্যাপকই শ্রেণিকক্ষে এবং বাইরে মুনীর চৌধুরীর সান্নিধ্য পেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন। অনেকেই তাঁর স্নেহধন্য ছিলেন। এঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সৈয়দ আকরম হোসেন, মনসুর মুসা, মুনিরুজ্জামান প্রমুখ। তাঁর ক্লাস পেয়েছেন বাংলা বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার কবির, মোস্তফা নুরুল ইসলাম, জিয়া হায়দার, খান আতাউর রহমান, শামীম আজাদ, মুনীর চৌধুরীর বোন ফেরদৌসী মজুমদার, তাঁর সহধর্মিণী লিলি চৌধুরীসহ আরও অনেকে। এঁরা প্রত্যেকেই মুনীর চৌধুরী সম্পর্কে তাঁদের নানা অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেছেন। এঁদের অনেকে পরে মুনীর চৌধুরীর সহকর্মী হয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক তখন আরেক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল। তখন তারা পরস্পর চিন্তা ও জ্ঞানের সংস্পর্শে এসেছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পরবর্তীকালে মুনীর চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী রচনা করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে মুনীর চৌধুরীর রচনাবলী সম্পাদনা করেছেন। আহমদ ছফা তাঁর ‘যদ্যপি আমার গুরু’ গ্রন্থে জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবার আগেই বাংলা একাডেমি থেকে পিএইচডি করার জন্য যখন আবেদন করেন, সাক্ষাৎকার প্যানেলে থাকা মুনীর চৌধুরী তখন পরম মমতায় তাঁর আবেদন মঞ্জুরে অবদান রেখেছিলেন। একই গ্রন্থে জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাকের কতটা স্নেহধন্য ছিলেন মুনীর চৌধুরী, তার বিবরণ আছে। মুনীর চৌধুরীও সে সময় অনেক শিক্ষকের মতো আবদুর রাজ্জাককে গুরু মানতেন।
এভাবে আমাদের চোখের সামনে যেন ভেসে ওঠে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকরা একে অপরের চিন্তা ও আলাপ-আলোচনার দ্বারা কীভাবে সমৃদ্ধ হতেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নানা ভাবে আহরিত জ্ঞান বিতরণ করতেন। মুনীর চৌধুরীসহ সেই সময়ের অনেক শিক্ষক ও ছাত্ররা আমাদের মাঝে নেই, তবে তাঁদের শিক্ষকতা ও চিন্তার ধারাটা অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে বিশ্বাস করি।
পাকিস্তান শাসনামলে প্রকৃতপক্ষে একটি বদ্ধ পরিবেশে যখন এদেশের বুদ্ধিজীবীদের লেখনি হুমকির মুখে ছিল, বা কাঙ্ক্ষিত পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারছিল না, তখন কিছু বুদ্ধিজীবী সর্বজনীনভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতির কথা প্রকাশ্যে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন। এদেরই একজন মুনীর চৌধুরী তাঁর বাগ্মীতার মাধ্যমে বদ্ধ পরিবেশে ঢাকার মধ্যবিত্তকে অনুপ্রাণিত এবং একটু খোলা হাওয়ার স্বাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা ক্লাসে হোক, আর কোন সভা সমিতিতে হোক। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে কলা অনুষদের ডিনের দায়িত্ব দেয়। তার আগে ১৯৬৯ সাল থেকেই তিনি বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন। অবরুদ্ধ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কাছে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে থেকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বকে তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। তবে তাঁর সতীর্থরা বলেছেন, সেসময় ক্লাস হয়েছে নামমাত্র। মুনীর চৌধুরীও সার্বিক পরিস্থিতিতে বিমর্ষ হয়ে তাঁর স্বভাবজাত প্রকাশভঙ্গির জৌলুস হারিয়ে নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিলেন, তবে নির্বাপিত হননি। একজন শিক্ষক বৈরি পরিবেশেও তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষার চর্চা আর শিক্ষকতা করে গেছেন আজীবন।
ঢাকা,, ২৭ নভেম্বর ২০২২

ছবি : স্ত্রী লিলি চৌধুরীর সঙ্গে মুনীর চৌধুরী

Exit mobile version