Site icon তীরন্দাজ

অভিবাসনের আমেরিকা | দীপেন ভট্টাচার্য | তীরন্দাজ গদ্য

পর্ব ১

আমরা সবাই পৃথিবী নামের এক মহাকাশযানের নাবিক। এই মহাকাশযান স্থান ও কালে ঊর্ধ্বশ্বাসে চলেছে মহাবিশ্বের কোনো এক অজানা প্রান্তের উদ্দেশে। কিন্তু এই জাহাজের সোয়ারিরা একে অপরকে চেনে না, বা চিনতে চায় না, অথচ মহাকাশযাত্রার জ্ঞান তাদের মধ্যে সঞ্চার করতে পারত এমন এক ধরনের একাত্মবোধ – যা জাতি, ধর্ম, বর্ণের ওপরে উঠে মানবসমাজকে তার যৌথ ভবিষ্যতকে এই অসীম মহাশূন্যমাঝে দেখতে সাহায্য করত। কিন্তু তা হয়নি। প্রতিটি সময়ের মানুষই হয়তো ভাবে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে ন্যায়-নীতির প্রতিষ্ঠা কিছুটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হবে, মানুষ একে অপরকে বুঝতে শিখবে, নিজেদের জীবনকে যেমন উন্নত করবে তেমনই প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করবে। মহাবিশ্বে জীবনের একটি মাত্র উদাহরণই আমরা জানি, নিঃসন্দেহে সেই উদাহরণটিকে বাঁচিয়ে রাখতে, অর্থবহ করতে আমাদের সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে এই মহাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু তা হয়নি।

১৮৪৯ সনে, ফরাসি লেখক জ্যঁ বাতিস্ত আলফোন্স কার লিখেছিলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয় বদলায়, ততই মনে হয় তা একই থেকে যায়।’ ১৮৪৮ সনে ফ্লান্সের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন নেপোলিয়ান। তার পিতা ছিলেন বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ছোটো ভাই। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট ১৭৯৯ সনে ফ্রান্সের ক্ষমতা নিয়েছিলেন, আর তার পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই তার পরিবারের আরেকজন ফ্রান্সের ভাগ্য নির্ধারণকর্তা হলেন – নেপোলিয়ান। তাঁর পিতৃব্যর মতোই দেশের চাষী ও অন্য শ্রমজীবীদের মুক্ত ও উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আলফোন্স কার স্যাটায়ার লেখক ছিলেন, এই ধরনের আশ্বাস তিনি আগেও দেখেছিলেন এবং সেগুলো যে বাস্তবে পরিণত হয় না, তা জানতেন। সে জন্যেই হয়তো তিনি লিখেছিলেন, ওপরে জিনিস বদলালেও নিচে সেই পরিবর্তন পৌঁছায় না। কিন্তু অতীতের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা তুচ্ছ করে বর্তমান পৃথিবী আমাদের বলছে পরিস্থিতি শুধু এক থাকছে না তা নয়, সেটি পিছন দিকেও হাঁটছে। দুটি দেশ, যা আমার চিন্তায় থাকে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ – এর অন্যতম দৃষ্টান্ত।

বর্তমানে, অর্থাৎ এই ২০২৫ সালে, মার্কিন দেশের সাধারণ মানুষের নীতিবোধ এক অদ্ভুত অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটি যেন দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দর্শনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে; এর একটি অংশ ভবিষ্যৎমুখী, আর অন্যটি অতীতের কাল্পনিক আমেরিকার কথা ভাবছে, যে-অতীত এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসী থেকে মুক্ত। এই শেষোক্ত আমেরিকা ট্রাম্পের আমেরিকা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে যে সামাজিক ব্যবস্থাপনা আর বিজ্ঞানের ওপর এই দেশটি গড়ে উঠেছিল, সেটিকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলতে চায়। একটি আধুনিক রাষ্ট্র যে তার সমস্ত নাগরিকের প্রতি দায়বদ্ধ, বিশেষত যারা অর্থনৈতিকভাবে সমাজের নিচের স্তরে অবস্থান করছে এবং যারা মানসিকভাবে নিজেদেরকে দেখাশোনা করতে অসমর্থ, সেই দর্শনে তারা বিশ্বাস করে না। এক অর্থে যে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত মার্কিন দেশ গিয়েছিল এবং যে গৃহযুদ্ধে দাসপ্রথার বিলোপ মুখ্য বিষয় ছিল, সেই গৃহযুদ্ধ যেন এখনো থামেনি।

এই প্রক্রিয়ায়, যে অভিবাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করেছে, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই যুদ্ধে মার্কিন দেশের প্রতিষ্ঠিত আইনী ব্যবস্থা লঙ্ঘিত হচ্ছে। যে আমেরিকা বিজ্ঞানে পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে, সেই আমেরিকা এখন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অর্থায়ন বন্ধ করছে। এর অন্যতম ভুক্তভোগী হলো স্বাস্থ্যখাত। যে আরএনএ ভ্যাক্সিন কোভিডকে জয় করেছিল, যার জন্য নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল, সেই অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। সরকারি কর্মচারিদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং যে সমস্ত কর্মকর্তাকে মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের প্রতি পুরোপুরি অনুগত নয়, তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। যেটা সবচেয়ে দুঃখজনক সেটা হলো সুপ্রিম কোর্ট, যাকে কি না গণতন্ত্র ও ন্যায়নীতি রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গণ্য করা হতো, অনেক ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের খামখেয়ালি বা স্বেচ্ছাচারি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট আচরণকে ন্যায্য বলে ঘোষণা দিচ্ছে।

আমরা এই অবস্থায় পৌঁছলাম কেমন করে? এবং এই পরিস্থিতিতে আমাদের মতো অভিবাসীরা ব্যাপারটাকে কীভাবে বিচার করবে? যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অভিবাসনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন অর্থনীতি বা একাডেমিক, তেমনই একটি স্থিতিশীল পরিবেশে বসাবসের আকাঙ্ক্ষা। এই পরিবেশ সৃষ্টিতে গত তিন শ বছর আমেরিকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে – আইন ও শাসন ব্যবস্থার জন্য যেমন, আবার জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার। একই সাথে আইনী অভিবাসনের একটা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে রূপ পেয়েছে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র ইউরোপের মানুষদের জন্য সেটি উন্মুক্ত ছিল, কিন্তু পরে সারা পৃথিবীর জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে রাজনৈতিক কারণে পালিয়ে আসা মানুষের জন্য অ্যাসাইলাম ব্যবস্থারও সৃষ্টি হয়।

এই যে সিস্টেম, সেটি নিশ্চয়ই কলম্বাস-পরবর্তী আমেরিকার জমি, ইউরোপীয়দের দখলের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে। এতে আদিবাসী উচ্ছেদ ও দাসপ্রথাও যুক্ত আছে। এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে আসা অনেক অভিবাসীই কলম্বাসের পর থেকে ইউরোপীয়দের দ্বারা আমেরিকার আদিবাসী জনগণের ওপর অবিচারের কথা উল্লেখ করে। কিন্তু তারা নিজেরা সেই অবিচারের দায়ভার গ্রহণ করে না। নব্য অভিবাসীরা এই কার্যকারণটি বুঝতে নারাজ যে, ওই দখলের মধ্যে তারও ভূমিকা রয়েছে, কারণ সেটি না হলে তার আমেরিকা আসার কোনো সম্ভাবনা ছিল না, একটি করুণ ইতিহাসের ধারাক্রমই যে তাদের নিজেদের অভিবাসনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত, সেটা ভুলে যায়।

এই বাস্তবতাটিকে মানার মধ্য দিয়ে এক ধরণের দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা সঞ্চারিত হয়। সেটি একদিকে আদিবাসী বা দাসপ্রথার অন্যায্যতা নিয়ে, অন্যদিকে ইউরোপ থেকে আগত প্রথম অভিবাসীদের মনোবল ও উদ্ভাবন নিয়ে। সেই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় অভিবাসন ব্যবস্থাটি ধীরে ধীরে রূপ পেয়েছে। এটি একটি এক্সপেরিমেন্ট, সেটি একদিনে হয়নি। নতুন অভিবাসীরা এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে অজ্ঞ, তারা এই জিনিসটাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে গ্রহণ করেছিল, অর্থাৎ এই প্রক্রিয়াটি যেন তার জন্য বিশেষভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এটিকে ব্যবহার করা যেন তার অধিকারের মধ্যে পড়ে। অথচ যে দেশ থেকে সে এসেছে, সেই দেশে এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের অনেকে মনে করেন, আমেরিকা অভিবাসীদের জায়গা, কাজেই নতুন অভিবাসীদের এখানে কৃতজ্ঞ থাকার কিছু নেই। তারাও নতুন দেশের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সমভাবে অংশগ্রহণ করছে। অর্থাৎ অনেকটা আমেরিকার প্রয়োজনেই তারা এসেছে। এই আইডিয়াটি অনেক পাঠকের জন্য চমকপ্রদ হতে পারে, কিন্তু অভিবাসীদের একটি অংশ তাদের অভিবাসনের ন্যায্যতা দিতে এই যুক্তিটি ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অভিবাসীরা মার্কিন দেশের ইতিহাসের ধারা সম্পর্কে পড়াশোনা করেননি, কিংবা বৃহত্তর সমাজের সাথে মিথস্ক্রিয়া করেননি। এর ফল হলো ট্রাম্পের মতো একটি অভিবাসন বিরোধী রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির উত্থান।

এখানে Manifest Destiny নামে একটি আইডিয়ার কথা বলা প্রয়োজন। মেনিফেস্ট মানে প্রকাশ্য বা স্পষ্ট, আর ডেস্টিনি এখানে ভাগ্য বা নিয়তি। ইউরোপ থেকে যখন প্রথম অভিবাসন শুরু হয় তখন তারা মনে করেছিল এই বিশাল অঞ্চল – যা কি না আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া পায়নি – তা ঈশ্বর শ্বেতকায় মানুষদের জন্য গচ্ছিত রেখেছিলেন। এই ধারণাটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে (১৮৪০–৫০) আমেরিকায় খুব শক্তিশালী ছিল। আমেরিকার নিয়তি বা ভাগ্য হলো তার ভূখণ্ডকে পশ্চিম দিকে, অতলান্তিক থেকে প্রশান্ত মহাসগর পর্যন্ত বিস্তৃত করা। এটা শুধু যে একটা রাজনৈতিক লক্ষ্য তা-ই নয়, বরং একটা ঈশ্বর-প্রদত্ত দায়িত্ব সভ্যতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার। এর ফলে নীতিনির্ধারক থেকে অনেক সাধারণ শ্বেতাঙ্গ মানুষ পশ্চিমাঞ্চলে স্থানীয় আদিবাসী আমেরিকান আর মেক্সিকান ভূখণ্ড দখলে নেওয়াকে ন্যায্য মনে করতেন। বর্তমানের ট্রাম্প-অনুসারীরা আবার সেই পুরাতন মেনিফেস্ট ডেস্টিনিতে ফিরে যেতে চাইছে। তারা এটা মুখে বলছে না, কিন্তু তাদের আচরণে তা স্পষ্ট। (বাংলাদেশে প্রত্যাখ্যাত দ্বিজাতি তত্ত্বের পুনরুত্থান এরকমই একটা পশ্চাদমুখী ধারণা, যার পুনর্বাসন ঘটছে; যদিও এই দুটি আইডিয়া পুরোপুরি ভিন্ন।) তবে আমেরিকার নিয়তি নিয়ে এসব ধারণা বোঝার জন্য আমাদের আরও পেছনে যেতে হবে – কলম্বাসের আগের আমেরিকার ইতিহাসে।

আমেরিকা বলতে এখন আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোঝালেও ভৌগলিক অর্থে এটি দুটি বিশাল মহাদেশ – উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। ১৪৯২ সনে কলম্বাসের আমেরিকার উপকূলে আগমন মানুষের ইতিহাসে এক নতুন পর্যায় যোগ করে। সেই পর্যায়টির অভিঘাত আজ চার শ বছর পরে সমগ্র বিশ্বের ওপর পড়ছে। কিন্তু চার শ বছর মানব সভ্যতার জন্য বড় কোনো সময়-পরিসর নয় – মিসরে এবং মেসোপটেমিয়ায় সেটি অবিছিন্নভাবে বেঁচে ছিল প্রায় তিন হাজার বছর। কলম্বাসের আগে আমেরিকার একটি প্রায় কুড়ি হাজার বছরের ইতিহাস আছে। এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই অস্পষ্ট। আজকে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আদিবাসীদের জ্ঞানও তাদের দূর অতীত পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। এই প্রেক্ষাপটে আমি ফিরে যেতে চাইছি আমেরিকার দুটি মহাদেশের আদিলগ্নে যখন এশিয়া থেকে মানুষের প্রথম পদার্পণ ঘটেছিল এখানে।

আমেরিকায় মানুষের প্রথম পদার্পণ

প্রথম মানুষ কবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল তা নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক মহলে বহু মত বিদ্যমান। সাইবেরিয়ার পূর্ব প্রান্ত থেকে বর্তমান আলাস্কায় মানুষ এসেছিল প্রায় তেরো হাজার বছর আগে। একসময় গবেষক মহলে এই ধারণাটি জনপ্রিয় ছিল। এই তত্ত্বটির নাম হলো ‘ক্লোভিস-প্রথম’, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঞ্চলের ক্লোভিস নামে একটি জায়গায় মানুষের তৈরি পাথরের বর্শার ফলা পাওয়া যায়। সেগুলোর বয়স প্রায় ১৩,০০০ বছর নির্ধারিত হয়। এরকম সূক্ষ্ম খোদাই করা একই সময়ে তৈরি পাথরের কাজ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সামগ্রিকভাবে একে ‘ক্লোভিস-সংস্কৃতি’ নামে আখ্যায়িত করেন। সেখান থেকে অনেকে ধারণা করেন যে, প্রাচীন মানুষরা সাইবেরিয়া থেকে আলাস্কা হয়ে প্রায় ১৩,০০০ বছর আগে, একটি বরফমুক্ত করিডর দিয়ে উত্তর আমেরিকায় প্রবেশ করে।
কিন্তু আধুনিক প্রত্নতত্ত্ব এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। চিলির মন্টে ভার্দে নামে এক স্থানে প্রায় ১৪,৫০০ বছর আগের একটি মানুষের বসতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা প্রমাণ করে বরফমুক্ত করিডোরের আগেই দক্ষিণ আমেরিকায় মানুষের উপস্থিতি ছিল। উপকূলবর্তী অভিবাসন তত্ত্বের মতে, তারা প্রশান্ত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে নৌকা অথবা হেঁটে উপকূলপথে উত্তর থেকে দক্ষিণে পৌঁছেছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। কানাডার ইউকনে অবস্থিত এক গুহায় (ব্লুফিশ কেভস) প্রাপ্ত পশুর হাড়ে কাটা দাগ প্রমাণ করে যে মানুষ সেখানে প্রায় ২৪,০০০ বছর আগে উপস্থিত ছিল। এই আবিষ্কার এমন এক তত্ত্বকে সমর্থন করে যেখানে বলা হয় – মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে বেরিঞ্জিয়াতে (সাইবেরিয়া, আলাস্কা ও ইউকন) আটকে ছিল, চারদিকে বরফের মধ্যে। অন্যদিকে দক্ষিণ ক্যারোলিনার টপার সাইট নামের একটি জায়গাকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে, যেখানে সম্ভাব্য মানব-কার্যকলাপ ১৬,০০০ থেকে ২০,০০০ বছর আগে ছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।
তা হলে কি আমরা ধরে নিতে পারি, মানুষ আমেরিকায় এসেছিল ১৩,০০০ বছরেরও আগে, একাধিক পথ ধরে, হেঁটে এবং নৌকায়, বরফমুক্ত অঞ্চল দিয়ে, উপকূল ধরে, আবার জলের ওপর দিয়েও? তারা শিকার করেছে, বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম বানিয়েছে এবং উত্তরের শীতল তুন্দ্রা থেকে দক্ষিণের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন পর্যন্ত পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। এই হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের পদচিহ্ন যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পড়েছিল, আজ সেই অঞ্চলই হয়ে উঠেছে বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। সেই ইতিহাসের ক্রমবিকাশ নিয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত আলোচনার আশা রাখি।
(চলবে…)

Exit mobile version